৩.৫০ টাকা লভ্যাংশ পেতে ৪.৩ টাকা লোকসান

পুঁজিবাজারে দরপতনের ঝড় অনেক কিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। আজ সোমবার (২৫) অক্টোবর এই ঝড়ের কবলে পড়ে অন্যভাবে লোকসানের শিকার হয়েছেন সামিট পাওয়ার লিমিটেডের বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক ও বাজারের জন্য উদ্বেগের বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আজ ছিল সামিট পাওয়ারের লভ্যাংশ ঘোষণাজনিত রেকর্ড তারিখের পর পুনরায় লেনদেন শুরু হওয়ার দিন। গত  ২৬ সেপ্টেম্বর এই ব্লুচিপ কোম্পানিটি সর্বশেষ হিসাববছরের জন্য ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর এই লভ্যাংশ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২৪ অক্টোবর। অর্থাৎ এ দিন পর্যন্ত যাদের কাছে সামিট পাওয়ারের শেয়ার থাকবে, তারা ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।

রেকর্ড তারিখের আগের দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সামিট পাওয়ারের শেয়ারের ক্লোজিং মূল্য ছিল ৪৬ টাকা ২০ পয়সা। এ দামে শেয়ার কিনে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ পাওয়া যাবে ৩ টাকা ৫০ পয়সা। এ  হিসেবে ঘোষিত লভ্যাংশের প্রকৃত হার (Dividend Yield) দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) সুদের হারের চেয়েও অনেক বেশি। এই ডিভিডেন্ড ইল্ড যে কোনো শেয়ারে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার মতো।

কিন্তু ভাল লভ্যাংশ ঘোষণা এবং আকর্ষণীয় ডিভিডেন্ড ইল্ড সত্ত্বেও আজ বাজারে সামিট পাওয়ারের শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ৪ টাকা ৩০ পয়সা বা প্রায় ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। এক পর্যায়ে কিছুক্ষণের জন্য শেয়ারটি ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়ে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যেসব বিনিয়োগকারী সামিট পাওয়ারের শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৫০ পয়সা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগ করে শেয়ার ধরে রেখেছিলেন, তাদেরকে আজ শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৩০ পয়সা লোকসানের মুখোমুখী হতে হয়েছে। অন্যভাবে বললে, ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ ডিভিডেন্ড ইল্ডের বিপরীতে ৯ দশমিক ৩০ শতাংশ লোকসান দাঁড়িয়েছে।

যদিও পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম উঠা-নামা খুবই স্বাভাবিক বিষয় এবং সামিট পাওয়ারের শেয়ারের দাম যে কোনো দিন আবার বাড়তে পারে, তবু বাজার বিশ্লেষকরা আজকের ঘটনাকে উদ্বেগজনক মনে করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বড় ব্রোকারহাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেন, ভাল লভ্যাংশ ঘোষণার পরও যদি রেকর্ড তারিখের পর শেয়ার মূল্যে এমন চিত্র দেখা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লভ্যাংশের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে চাইবেন না। তারা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগের পরিবর্তে স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ, বিশেষ করে মূলধনী মুনাফাকে (Capital Gain) প্রাধান্য দিয়ে বিনিয়োগ করবেন। তাতে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। সব বিনিয়োগকারী মূলধনী মুনাফার পেছনে ছুটলে বাজার ভারসাম্য হারাবে, স্থিতিশীলতা পড়বে ঝুঁকিতে।

তবে তিনি আশা করেন, আজ বিশেষ বাজার পরিস্থিতির কারণে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজার স্বাভাবিক ধারায় ফিরলে বিনিয়োগকারীদের আচরণও হয়তো আজকের চেয়ে ভিন্ন ও যৌক্তিক হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.