সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতলো সাকিবরা

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ফাইনালের টিকিট নিশ্চিতের লড়াইয়ে মাঠে নেমেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও দিল্লি ক্যাপিটালস। এবারে আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জয়ের জন্য কলকাতাকে ১৩৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছে দিল্লি। পূর্বের ম্যাচের ন্যায় এ ম্যাচেও হিসেবী বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান। উইকেট না পেলেও চার ওভারে ৭.০০ ইকোনোমিতে বোলিং করে ২৮ রান দিয়েছেন তিনি।

বুধবার আইপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতলো কলকাতা। ২৫ বলে প্রয়োজন ছিল ১৩ রানের, তখনও হাতে ৯ উইকেট। কিন্তু সহজ এই ম্যাচটি কলকাতা জিতলো ১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেট হারিয়ে! হারের পথে থাকা কলকাতার ফাইনাল নিশ্চিতের নায়ক ত্রিপাঠি। তার দারুণ এক শটে ছক্কা হতেই ফাইনালে নাম লিখে ফেলে সাকিবরা।

শেষ ৪ ওভারে কলকাতার ব্যাটারদের চেপে ধরেন দিল্লির বোলাররা। ১৬তম ওভারের শেষ বলে নিতিশ রানাকে (১৩) শিমরন হেটমায়ারের তালুবন্দি করেন আনরিখ নর্কিয়া। ঠিক তখনই ভেঙে পড়ে কলকাতার ব্যাটিং লাইনআপ। ২৫ বলে ১৩ রানের সহজ লক্ষ্যটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলেন শুভমান গিল, দিনেশ কার্তিক, ইয়োন মরগান, সাকিব ও সুনিল নারাইন দ্রুত ফিরে গেলে। শুভমান ছাড়া বাকি চার ব্যাটারের কেউই রানের খাতা খুলতে পারেননি!

দলের মিডল অর্ডার যখন ব্যর্থ, তখন ত্রাতার ভূমিকাতে ত্রিপাঠি। চার নম্বরে নেমে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিল দেখা ত্রিপাঠিই মূলত জয়ের নায়ক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন ৭ রান প্রয়োজন, তখন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের পরপর ২ বলে ফিরে যান সাকিব ও নারাইন। প্রথম ৪ বলে মাত্র ১ রান আসায় শেষ ২ বলে জিততে প্রয়োজন পড়ে ৬ রান। অশ্বিনের হ্যাটট্রিকের সুযোগ আসা পঞ্চম বলে ত্রিপাঠি ঠাণ্ডা মাথায় বিশাল এক ছক্কায় কলকাতাকে ফাইনালে তুলে নেন। দম বন্ধ করা ম্যাচে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সাকিবরা।

অথচ জয়ের সহজ পথ শুরুতেই তৈরি করে ফেলেছিলেন শুভমান ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। দুজন মিলে ওপেনিং জুটিতে ৯৬ রান তুলে ফেলেন। শুভমান ৪৬ রানে আউট হলেও ভেঙ্কটেশ ৪১ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস খেলেন। আগের ম্যচের মতো এই ম্যাচেও নায়ক হতে পারতেন সাকিব। কিন্তু ২ বল খেলা বাঁহাতি ব্যাটার ব্যাটে-বলে সংযোগই করতে পারেননি। ২ বলে শূন্য রান করে আউট হয়েছেন তিনি। শারজাতে আগের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ৯ রান করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে বিদায় করে ফাইনালে যাওয়ার পথটা তৈরি করেছিলেন তিনি। কোয়ালিফায়ারেও বোলিংয়ে ভালো করেছেন, তবে ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ সাকিব।

দিল্লির বোলারদের মধ্যে অশ্বিন, নর্কিয়া ও কাগিসো রাবাদা প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট। আর আবেশ খান নিয়েছেন একটি উইকেট।

এর আগে টস জিতে কলকাতা অধিনায়ক মরগান ব্যাটিংয়ে পাঠান দিল্লিকে। সাকিবদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দিল্লির ইনিংস বেশিদূর এগোয়নি। ৫ উইকেটে ১৩৫ রান করে তারা। দিল্লির পক্ষে শিখর ধাওয়ান সর্বোচ্চ ৩৬, পৃথ্বি শ্ব ১৮ ‌এবং শেষ দিকে শ্রেয়াস আইয়ার ২৭ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৩২ রানে পৃথ্বি শ্ব’র উইকেট হারায় দিল্লি।

বরুণ চক্রবর্তীর বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মার্কাস স্টইনিসকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন ধাওয়ান। ১৮ রান করে স্টইনিস ফিরলে ভাঙে তাদের এই জুটি। আর ধাওয়ান ফিরেছেন সাকিবের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ঋষভ পান্তও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, আউট হয়েছেন মাত্র ৬ রান করে। ১৭ রান করে ফিরেছেন শেমরন হেটমায়ার। ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন অক্ষর প্যাটেল। কলকাতার হয়ে সর্বোচ্চ ২৬ রানে ২ উইকেট শিকার করেন বরুণ চক্রবর্তী, ১টি করে উইকেট ফার্গুসন এবং মাভির।

আগের ম্যাচগুলোর মতো এ ম্যাচেও সাকবকে দিয়ে বোলিং শুরু করেন কলকাতার অধিনায়ক ইয়ন মরগান। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন প্রথম ওভারে মাত্র ১ রান দিয়ে। ১ ওভার পর নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে সাকিব ছিলেন কিছুটা খরুচে, দিয়েছেন ১২ রান।

এই ওভারের প্রথম দুই বলে তাকে একটি চার ও ছয় হাকান পৃথ্বী শ্ব। বাকি চার বলে সাকিব দেন ২ রান। নিজের তৃতীয় ওভারেও সাকিব দিয়েছেন ১১ রান। সেই ওভারে স্টইনিস হাঁকিয়েছেন তাকে একটি চার। আর স্পেলের শেষ ওভারে অবশ্য ঘুরে দাড়িয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার, দিয়েছেন মাত্র ৪ রান।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.