রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ: ৫ আসামির রায় আজ

রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির রায় আজ ঘোষণা করবেন আদালত।

রোববার (১০ অক্টোবর) ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করবেন। মামলার আসামিরা হলেন- আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই-মেকার্স’-এর কর্মকর্তা নাঈম আশরাফ, রেগনাম গ্রুপের এমডি মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী।

আদালত গত ৩ অক্টোবর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করে পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান।

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর বিচারক পাঁচ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলায় মোট ৪৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আমরা আশা করি, আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে।’

অপরদিকে আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আল্লাহর দুনিয়ায় আল্লাহ সবার মঙ্গল বয়ে আনুক। আশা করছি, আসামিরা রায়ে ন্যায়বিচার পাবেন।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। ওই মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী, তার বান্ধবী ও বন্ধু শাহরিয়ারকে আটক রাখেন। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে ঘরে নিয়ে যান আসামিরা। বাদীকে সাফাত আহমেদ একাধিকবার এবং বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।

এজাহারে আরো বলা হয়, ঘটনার দিন সাফাতের জন্মদিনে দুই ছাত্রী যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাঁদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের দ্য রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে বাদী ও তার বান্ধবী জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। অনুষ্ঠান হবে হোটেলের ছাদে। সেখানে যাওয়ার পর তারা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। সেখানে আরও দুই তরুণী ছিলেন। বাদী ও বান্ধবী দেখেন, সাফাত ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে ছাদ থেকে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই সময় বাদীর বন্ধু ও আরেক বান্ধবী ছাদে আসেন। পরিবেশ ভালো না লাগায় তারা চলে যেতে চান। পরে আসামিরা তাদের গাড়ির চাবি শাহরিয়ারের কাছ থেকে নিয়ে নেন। তাকে খুব মারধর করেন।

এতে বলা হয়, ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন এবং তিনি প্রতিবাদ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর বাদী ও বান্ধবীর বাসায় দেহরক্ষী পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পেয়ে যান। পরে লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এতে মামলা করতে বিলম্ব হয়।

২০১৭ সালের ৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে সাফাতসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এ্যানি।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার ১৫ দিন আগে গুলশানের পিকাসো হোটেলে সাফাতের সঙ্গে পরিচয় হয় বাদীর। সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফের সঙ্গে বাদী ও ভিকটিমের মামলার ঘটনার ১০/১৫ দিন আগে বাদীর পূর্বপরিচিত বন্ধু সাদমান সাকিফের মাধ্যমে গুলশান থানাধীন পিকাসো হোটেলে পরিচিত হয়। পরিচয় হওয়ার পর সাফাত আহমেদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়। কথা হওয়ার মাঝে সাফাত আহমেদ ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ তার জন্মদিনের প্রসঙ্গ তুলে বাদীকে তার বান্ধবীসহ অন্য বন্ধুদের নিয়ে জন্মদিনের পার্টিতে রেইনট্রি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আসার জন্য দাওয়াত দেন। ঘটনার দিন সাফাত আহমেদ তার নিজের ব্যবহৃত গাড়ি ও ড্রাইভার বিল্লাল হোসেন এবং গানম্যান রহমতকে পাঠান বাদীকে ও তার বান্ধবীকে তাদের নিজ বাসা নিকেতন থেকে নিয়ে আসতে। রাত ৯টায় তাদের রেইন ট্রি হোটেলে নিয়ে আসেন এবং ড্রাইভার বিল্লাল তাদের হোটেল রুমে পৌঁছিয়ে দেন। হোটেলে আসার পরে ওখানে কোনো পার্টির পরিবেশ না দেখে বাদী ও তার বান্ধবী চলে যেতে চাইলে আসামিরা বান্ধবী ও বাদীকে কেক কেটে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেখানে বাদীর বন্ধু শাহরিয়ার ও স্নেহা ছিলো। বাদী তার বন্ধুদের নিয়ে আবার চলে যেতে চাইলে সাফাত ও নাঈম বাদীর বন্ধুদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বাদীর বন্ধু শাহরিয়ারের গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেয়। এরপর বাদীর বন্ধু শাহরিয়ারকে ৭০৩ নম্বর কক্ষে আটকে রাখে। পরে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ রেইনট্রি হোটেলের ৭০০ নম্বর সুইট রুমে বাদীকে ও ভিকটিমকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক মদ পান করায়। লিভিং রুমে সোফার উপরে সাফাত বাদীকে ও বেড রুমের খাটে নাঈম আশরাফ বান্ধবীকে ধর্ষণ করেন। এ সময় বাদীকে খুব মারধর করা হয়। বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ করার সময় সাফাত গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলেন। বাদীকে নাঈম আশরাফ মারধর করেন। এরপর বাদী ও তার বান্ধবীর বাসায় রহমত আলীকে পাঠানো হয় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠে পরে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা মামলার সিদ্ধান্ত নেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ঘটনার একদিন আগে সাফাত পার্টির জন্য মদের বোতল রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে আসেন। ধর্ষণের পর সাফাত আহমেদের নির্দেশে ড্রাইভার বিল্লাল হোসেন ওষুধের দোকান থেকে আইপিল (জন্মনিরোধ) সংগ্রহ করে আনেন। পরবর্তীতে সাফাত আহমেদ জোরপূর্বক বাদীকে আইপিল খাওয়াতে চান। কিন্তু বাদী আইপিল খেতে না চাইলে বাদীর বন্ধু শাহরিয়ার ও বাদীকে সাফাত ও নাঈম মারধর করেন। এ মারধরের ঘটনা নাঈমের নির্দেশে ড্রাইভার বিল্লাল মোবাইলে রেকর্ড করে রাখে। পরে সে ভিডিওগুলো তারা ডিলিট করে দেয়। পুলিশ তদন্তের সময় মোবাইল থেকে ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেই ভিডিওগুলো উদ্ধার করে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.