পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে আরও ১০০ কোটি টাকা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত লভ্যাংশের অপরিশোধিত অংশ পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যবহারের লক্ষ্যে গঠিত ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)’ বা পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিলের জন্য আরও ১০০ কোটি টাকার চেক বা ব্যাংক ড্রাফট নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে এসেছে। শিগগিরই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফান্ডের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাবে।

বিএসইসির তথ্য মতে, গত শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বিএসইসিতে ২১০ কোটি টাকার নগদ অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা হয়েছে। তার সঙ্গে নতুন করে আরও প্রায় ১০০ কোটি টাকার চেক ও ব্যাংক ড্রাফট জমা হয়েছে। অর্থাৎ নগদ ও বোনাস শেয়ার মিলে ৩১০ কোটি টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে।

যদিও বিএসইসি’র প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ জমা পড়েনি। সংস্থাটির ধারণা ছিল, এই টাকার পরিমাণ হবে ২০-২১ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোকে এই টাকা গত ৩০ আগস্টের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়সীমা পার হওয়ার ২০ দিন পরও প্রত্যাশা অনুসারে টাকা জমা পড়েনি।

পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে তালিকাভুক্ত ৭১টি কোম্পানি, ১৪টি মিউচুয়াল ফান্ড এবং একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি তার ব্যবস্থাপনাধীন বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ডের অবণ্টিত লভ্যাংশ হিসাবে মোট ২১০ কোটি টাকা জমা করেছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪৮ কোটি টাকা জমা দিয়েছে ১৩টি ব্যাংক এবং ছয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এছাড়াও কোম্পানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা জমা দিয়েছে ওষুধ খাতের কোম্পানি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড। এরপর সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোন জমা দিয়েছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ জমা দেওয়া টাকা।

ব্যাংক খাতের কোম্পানি ইসলামী ব্যাংক ফান্ডে জমা দিয়েছে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মা ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক সোয়া ৬ কোটি টাকা, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ইউসিবি ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, স্কয়ার টেক্সটাইল ৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, এসিআই লিমিটেড ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ও লাফার্জ-হোলসিম ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা এ তহবিলে জমা দিয়েছে। এর বাইরে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ২০ কোটি ৪২ লাখ টাকা জমা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ মে কমিশন সভা করে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। গত ২৭ জুন এ তহবিলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ নিয়ে এ তহবিল গঠন করা হবে। এ তহবিলটি পরিচালনার জন্য ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিভিন্ন কোম্পানির অবিতরণ করা লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে তিন বছরের অধিক সময় পড়ে থাকা অর্থ-শেয়ার এ তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। তিন বছরের হিসাব হবে লভ্যাংশ ঘোষণা বা অনুমোদনের দিন বা রেকর্ড ডেট থেকে। এক্ষেত্রে নগদ লভ্যাংশ বা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা থাকায় কোনো সুদ অর্জিত হলে, তাও এ তহবিলে দিতে হবে।

তহবিলে শেয়ার বা টাকা হস্তান্তরের পরও তা দাবি করতে পারবেন সংশ্নিষ্ট বিনিয়োগকারী। নিজের দাবির প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি বা ব্রোকারেজ হাউজ বা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনের এক মাসের মধ্যে ওই বিনিয়োগকারীর শেয়ার বা টাকা ফেরত দেওয়া হবে। তহবিল থেকে বাজারের তারল্যপ্রবাহ এবং গভীরতা বাড়াতে শেয়ার কেনাবেচা বা ধার দেওয়া বা ধার নেওয়া হবে। শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে যাতে তহবিলের কোনো লোকসান না হয়, তার জন্য সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করা হবে, থাকবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অডিট কমিটি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.