জামালপুরের নিখোঁজ সেই তিন ছাত্রী ঢাকা থেকে উদ্ধার

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা থেকে গত রোববার নিখোঁজের পর তিন মাদ্রাসাছাত্রীকে রাজধানী ঢাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। রাজধানীর মুগদার মান্ডা এলাকার একটি বস্তি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে তাদের উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলো- ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের পোড়ারচর সরদারপাড়া গ্রামের মাফেজ শেখের মেয়ে মীম আক্তার (৯), গোয়ালেরচর ইউনিয়নের সভুকুড়া মোল্লাপাড়া গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে মনিরা খাতুন (১১) ও সুরুজ্জামানের মেয়ে সূর্য ভানু (১০)।

উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন জামালপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ইসলামপুর সার্কেল) মো. সুমন মিয়া।

তিনি বলেন, নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সন্ধান পেতে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র ধরে সম্ভাব্য স্থানগুলোতে অভিযান চালায়। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করা হয়। পরে স্থানীয় রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুগদা থানার মান্ডা এলাকার রাজা মিয়া (১৪) নামে এক রিকশাওয়ালার বাসায় তাদের সন্ধান পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাজা মিয়া জানিয়েছে, সরল বিশ্বাসে ওই শিশুদের বোন মনে করে সে তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিল।

এএসপি সুমন মিয়া আরও জানান, গত রোবাবর গভীর রাতে ইসলামপুর উপজেলার একটি আবাসিক মাদ্রাসা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির তিন ছাত্রী নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর থেকে তাদের উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ। অভিযানের এক পর্যায়ে ঢাকার মুগদার মান্ডা এলাকার এক বস্তি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে তারা ট্রেনে করে ইসলামপুর থেকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসে। ট্রেন থেকে নেমে তারা একটি রিকশায় ওঠে। ওই রিকশার চালক ছিল এক কিশোর। তার সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে ওই তিন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের থাকার জায়গা নেই, তাদের যেন থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। পরে ওই কিশোর মান্ডা এলাকার এক বস্তিতে দেড় হাজার টাকায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দেয় এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করে।

এএসপি সুমন মিয়া আরও জানান, তিন শিক্ষার্থীর বক্তব্য অনুযায়ী, তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ না করায় ওই কিশোর রিকশাচালককে আটক করা হয়নি। রাতেই ওই তিন মাদ্রাসাছাত্রীকে সেখান থেকে উদ্ধার করে জামালপুরে নেওয়া হয়েছে। শিশু ডেস্কের কর্মকর্তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পরবর্তী সময়ে হয়তো আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

গত রোববার জামালপুরের এক আবাসিক মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ হয় ওই তিন শিক্ষার্থী। এরপরই সোমবার বিকেলে মাদ্রাসার মুহতামিম ইসলামপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ঘটনার পর মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও দুই শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই মাদ্রাসায় ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে আট জন শিক্ষক পাঠদান করান। এ ছাড়া মুহতামিম পরিবার নিয়ে মাদ্রাসার ভেতরেই একটি কক্ষে বসবাস করেন। মাদ্রাসাটি ২০২০ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছেন তিনি। ঘটনার দিন ভোররাতে শিক্ষার্থীদের ফজরের নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জাগানো হয়। অন্যান্য ছাত্রীদের মতোই দ্বিতীয় শ্রেণির ওই তিন ছাত্রীও নামাজের প্রস্তুতি নেয়। নামাজের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এ বিষয়ে জামালপুর এএসপি সুমন মিয়া জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থীকে রাতেই তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.