জাপানি মাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠালেন বাংলাদেশি বাবা

বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে দুই শিশুর মা ও জাপানি নারী নাকানো এরিকোকে এবার লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন তার সাবেক স্বামী বাংলাদেশি শরিফ ইমরান।

আজ মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শরিফ ইমরানের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

তিনি বলেন, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে ইমরান শরীফের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করায় এরিকোর কাছে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া এঘটনায় এরিকোকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।

ফাওজিয়া করিম জানান, নাকানো এরিকোর গুলশান-২ এর ঠিকানায় এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে,৭ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের ৫ কোটি টাকা না দিলে ও প্রকাশ্য ক্ষমা না চাইলে নাকানো এরিকোর বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।

শরিফ ইমরানের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম বলেন, নাকানো এরিকো সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন শিশু দুটিকে নাকি বাবা জাপান থেকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া শিশুদের বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে বাবা নাকি শিশু দুটিকে অপহরণ করেছে, যেন শিশু দুটির স্কুলের ভর্তি বাতিল হয়। আবার চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে যেটি সম্পূর্ন মিথ্যা। এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিশু দুটির বাবার মানহানি করেছে। এ কারণে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি।

২০০৮ সালে বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) ও জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো (৪৬) জাপানের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বিয়ের পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান ও এরিকোর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্ত এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর এক দিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। পরে দুই শিশুকে ঢাকা নিয়ে আসেন তাদের বাবা। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।

গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই জাপানি শিশু কন্যা জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স কর্পাস আবেদন করেন তাদের মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। রিটে দুই কন্যা সন্তানকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চান ওই নারী।

পরে ওইদিনই দুই জাপানি শিশু এবং তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর গত ২২ আগস্ট দুই শিশুকে খুঁজে বের করে হেফাজতে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন সকালে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন দুই শিশুর বাবার পক্ষে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম।

পরে শুনানি নিয়ে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার তেজগাঁওয়ে পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই সন্তানকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে রাজধানীর গুলশানে একটি বাসায় একসঙ্গে আগামী ১৫ দিন বসবাস করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি ঢাকার সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক পদের একজনকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারকে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.