পেলের রেকর্ড ভেঙে কাঁদলেন মেসি

আরও একবার জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স উপহার দিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর লিওনেল মেসি। ক্লাব ফুটবলে হিরো আর আন্তর্জাতিকে জিরো-র তকমাটা আরও একবার অমূলক প্রমাণ করলেন তিনি। একা হাতে জাদুকরী পারফরম্যান্সে জয় এনে দিলেন দলকে।

নিন্দুকদের মুখ যে আগেও বন্ধ করেননি, তা নয়। এবার সমালোচকদের থামাতে যা করে দেখালেন, তা করতে বিশ্বের প্রায় সব খেলোয়াড় শুধু স্বপ্নই দেখবেন। বলিভিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে জাতীয় দলের হয়ে নিজের গোলসংখ্যা ৭৯ তে নিয়ে গেলেন মেসি। ছাড়িয়ে গেলেন ব্রাজিলের হয়ে ৭৭ গোল করা পেলেকে। কনমেবলের ইতিহাসে এত বেশি গোল আর কারওর নেই।

মেসির হ্যাটট্রিকেই ৩-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচশেষে আনন্দের আতিশয্যে মেসির চোখে আবেগের বান ডাকল যেন। চোখ দিয়ে টপটপ করে পড়তে থাকল পানি। কেউ যদি এখনও মনে করেন, আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি নিজের শতভাগ দেন না, হ্যাটট্রিকের দৃশ্যটার পাশাপাশি এই ছবিটাও তাঁদের সমালোচনার জবাব হয়েই থাকবে বহু বহু যুগ।

বাছাইপর্বে বহুদিন পর নিজেদের মাঠে খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। করোনার ভয় কাটিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন দর্শকও। আজ মনুমেন্তালে যারা গিয়েছিলেন, পয়সা উসুল করেই বাড়ি ফিরেছেন। মেসি কী আর বারবার পেলেকে টপকাবেন!

ম্যাচ শেষের সাক্ষাৎকারেও মেসির গলা দিয়ে উপচে পড়ল আবেগ। ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন মেসির মা, ভাই। তারাও সরাসরি সাক্ষী হয়েছেন এই ইতিহাসের। মেসি আবেগপ্রবণ হবেন না-ই বা কেন! নিজের মাঠে এই উদযাপনটা করতে পেরে মেসি নিজেও খুশি, ‘মনুমেন্তালে এই রেকর্ডটা উদযাপন করতে পারছি, এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার মা ও ভাই স্ট্যাডে আছে, তারা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে। তারা আজ আমার জন্য উদযাপন করছে। আমি অনেক খুশি।’

এই রেকর্ড গড়াটা যে মেসির স্বপ্ন ছিল, সেটা লুকোননি, ‘আমি আসলেই এই মূহুর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি এই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে চেয়েছি। রেকর্ডটা ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রেকর্ডটা আমার হয়েছে। অসাধারণ এক মূহুর্ত এটা।’

বর্তমানে খেলছেন কনমেবলের এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে মেসির পেছনে সর্বোচ্চ গোলদাতার এই রেকর্ডে আরও আছেন নেইমার, যার গোল ৬৮টা। ৬৩ গোল নিয়ে আছেন উরুগুয়ের লুইস সুয়ারেজও। মেসি যেভাবে খেলছেন, তাতে আরও অনেক দিন রেকর্ডটা তার কাছেই থাকবে এটা নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া যায়।

আজ শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোরে মেসির হ্যাটট্রিকে ঘরের মাঠে বলিভিয়াকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে একবার লক্ষ্যভেদ করা মেসি দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুইবার জালে বল জড়িয়ে হ্যাটট্রিক করার পথে ছাড়িয়ে গেছেন পেলকে।

বুয়েনস এইরিসের এল মনুমেন্তালে উপস্থিত দর্শকদের আনন্দের জোয়ারে ভাসালেন মেসি। ১৪ মিনিটে প্রথমবার জাল খুঁজে পেয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন। ৬৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল, ওই গোলেই পেলেকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। আর ম্যাচ শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগে বলিভিয়ার কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে পূরণ করেন হ্যাটট্রিক। মেসির অসাধারণ ফুটবলের সামনে বলিভিয়াকে বেশিরভাগ সময় আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।

অনেকদিন পর ঘরের মাঠে দর্শকদের সামনে ম্যাচ। উজ্জীবিত আর্জেন্টিনা শুরু থেকেই আক্রমণের পসরা সাজিয়ে ব্যস্ত রাখে বলিভিয়ার রক্ষণভাগ। গোলের জন্যও খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন মেসি। দেখার মতো এক গোল করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে লিড এনে দেন। গোলটি দেখলে মনে হবে কত সহজে হয়ে গেলো! লিয়ান্দ্রো পারেদেসের কাছ থেকে বল পেলেন গোল থেকে ৩০ গজ দূরে। বলিভিয়ার এক খেলোয়াড়ের দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল বের করে কয়েক পা এগিয়ে চেপে থাকা প্রতিপক্ষের অন্য খেলোয়াড়দের বুঝে ওঠার আগেই ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট জড়িয়ে দেন জালে। সফরকারী গোলকিপারের কিছু করার ছিল না।

দ্বিতীয় গোলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। একের পর এক আক্রমণে বল জালেও জড়িয়েছিলেন একবার লাউতারো মার্তিনেস। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদে পড়েন তিনি। খানিক পরে এই মার্তিনেস মিস করেছেন সহজ সুযোগ। মেসির বানিয়ে দেওয়া বলটা একেবারে ফাঁকায় পেয়েও কীভাবে প্লেসিং করতে পারলেন না, ইন্টার মিলান স্ট্রাইকারও হয়তো বুঝতে পারলেন না। বল চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে।

এরপর বিরতিতে যাওয়ার আগে মেসিও একটি ভালো সুযোগ তৈরি করেছিলেন। আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ানে আড়াআড়ি শট করলেও পোস্টে রাখতে পারেননি বল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে দ্বিতীয়বার জাল খুঁজে নিতে ভুল হয়নি তার। বেশ কয়েকটি ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে ৬৪ মিনিটে সফল। এই গোলে অবদান আছে লাউতারোরও। ইন্টার ফরোয়ার্ডের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় দুই দফা বল দেওয়া-নেওয়া করে ছোট বক্সের সামনে প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি।

গ্রীষ্মের দলবদলে পিএসজিতে নাম লেখানো মেসির গোলের ক্ষুধা তখনও মেটেনি। ৮৮ মিনিটে নিজের ও দলের তৃতীয় গোলটি করেন ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ২৫ গজ দূর থেকে হোয়াকিন কোরেয়ার বুলেট গতির শট বলিভিয়া গোলকিপার প্রতিহত করলেও ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফিরতি বলে শট করে জাল খুঁজে নিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মেসি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.