স্কুল খুলতে ৮০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীকে নিতে হবে টিকা

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কিছু সতর্কতা দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

এতে বলা হয়, স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীর করোনার টিকা নেওয়া থাকতে হবে এবং তারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পার হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ১ম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) রাতে কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

কারিগরি কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগেই সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক/কর্মচারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের সব ধরনের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সুপারিশে বলা হয়, সব স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ব্যতীত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত, মানসম্পন্ন ও সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য পদক্ষেপ, যেমন হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া বা হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন) ও সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

কমিটি বলেছে, স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক–কর্মচারীর কোভিড-১৯–এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে। উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

কমিটি বলেছে, শ্রেণিকক্ষে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোন দিন হবে, তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন প্রথম দিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক বা দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে একটি নির্দিষ্ট দিনে যে ক্লাসটি খোলা থাকবে, তার শিক্ষার্থীরা অন্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। প্রাতঃসমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) বন্ধ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

প্রথম দিকে কম সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি, যাতে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।

কমিটি আবাসিক সুবিধাসংবলিত স্কুল, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সমাবেশ–স্থানগুলো (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা, রান্নাঘর থেকে রুমগুলোয় সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা ও একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার না করা। মাদ্রাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করার ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, যেমন শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।

কোভিড-১৯–সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা গতকালের সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবেরাও ছিলেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.