জমির জন্য মাকে মারলেন ক্লোজআপ ওয়ান তারকা!

জমির অংশ ও টাকা চেয়ে না পেয়ে মায়ের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু আহমেদের বিরুদ্ধে। ছেলের হামলায় গুরুতর আহত সাজুর মা রানীজান বেগম (৬৫) বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথায় কয়েকটি সেলাই পড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নে সাজুর নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। সাজুর মা হামলার অভিযোগ করে সাজুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তবে অভিযুক্ত ক্লোজআপ ওয়ান তারকা সাজু আহমেদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, জমির অংশ দাবি করায় পারিবারিক বাদানুবাদের এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে তার বড় বোন ঢিল ছুড়েন। সেই ঢিল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার মায়ের মাথায় আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়।

সাজু আহমেদ ২০০৮ সালে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি আয়োজিত রিয়ালিটি শো ক্লোজআপ ওয়ান তারকার দ্বিতীয় রানারআপ নির্বাচিত হন। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নে। ওই ইউনিয়নের তেলিপাড়ার আজগর আলী (মৃত) ও রানীজান বেগমের ছোট ছেলে সাজু।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রানীজান বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টাকা এবং জমির অংশ দাবি করে নানারকম মানসিক অত্যাচার করে আসছে সাজু। প্রায়ই সে মারধরের চেষ্টা করেছে। কখনও চেয়ার কখনও ইট আবার কখনও লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতো। শুক্রবার আবারও টাকা দাবি করে সাজু। না দিলে জমির অংশ দাবি করে। অনেক বাদানুবাদের পর হঠাৎ আমাকে লক্ষ্য করে প্রথমে ইট দিয়ে ও পরে ধারালো চাকু দিয়ে ঢিল ছোড়ে সাজু। এ সময় চাকুর আঘাতে আমার বাম চোখের ওপর কপালে কেটে যায়। পরে স্বজনরা উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। আমার কোলের সন্তান। সে আমাকে আর মা বলে পরিচয় দেয় না। ওর জন্য আমি ফকির হয়ে গেছি। আমি ওর জন্য ভিক্ষা করেছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কুড়িগ্রামবাসী সবাই জানে। কিন্তু আর না।’ বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন রানীজান বেগম।

নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সাজু আমার অবাধ্য সন্তান। সে চেয়ারম্যান পদে (ইউনিয়ন পরিষদের) নির্বাচন করবে বলে জমির ভাগ চাচ্ছে এবং এজন্য প্রায়ই সে আমাকে অপদস্ত করে আসছে। ২০০৮ সালে তার ক্লোজআপ ওয়ান তারকা হওয়ার জন্য এসএমএসের পেছনে জমি বন্ধক রেখে লাখ লাখ টাকা শেষ করছি। এখন তার নিজের জমানো অর্থ দিয়ে নির্বাচন করতে বলেছি এবং পরে জমির অংশ দিতে চেয়েছি। কিন্তু সে নির্বাচনের আগেই জমির অংশ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য আমার ওপর হামলা করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

‘আমি ওর জেল চাই, বিচার চাই। ওর পেছনে কিছু বখাটে ছেলে-পেলে আছে, তারা ওর টাকা পয়সা ধ্বংস করবে, ওর বাবার সংসারটা ধ্বংস করে দেবে। ওর (সাজুর) বিচারটা দেখে তারা যেন শিক্ষা পেয়ে যায়’, যোগ করেন ভুক্তভোগী এই মা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সাজু আহমেদ বলেন, ‘আমি জমির অংশ দাবি করেছি বলে আমার মা ও বড় বোন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমি মায়ের ওপর আঘাত করিনি। বোনের ছোড়া ঢিল আমার শরীরে না লেগে মায়ের মাথায় লেগেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

সাজুর বড় বোন ও থানায় অভিযোগকারী আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘সে আমাকে কয়েকবার মারতে চেয়েছে। পরে আমার মা প্রতিবাদ করায় সে মাকে চাকু দিয়ে আঘাত করে। আমার চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অনেকে বাড়িতে উপস্থিত ছিল। এখন সে নিজের দোষ ঢাকতে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছে। মা তো নিজেই তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।’

উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ভুক্তভোগীর বড় মেয়ে বাদী হয়ে অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.