২ বোনের শিল্পকর্মে মুগ্ধ মানুষ

জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর থেকে: শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর গ্যালারিগুলোতে অনেকেই আসছেন, দেখছেন। সাধ্যে কুলোলে চিত্রকর্ম সংগ্রহও করছেন। এমনকি জন্মদিন, বিয়ে, কোনো বার্ষিকীসহ বিভিন্ন উৎসবে-আয়োজনে অনেকেই গতানুগতিক উপহারের বদলে এখন নানা মাধ্যমের শিল্পকর্ম উপহার দিচ্ছেন। শিল্পকর্ম এখন আগ্রহ ও রুচির ব্যাপার। করোনার অবসন্নতা কাটাতে লক্ষ্মীপুরের কলেজে পড়ুয়া দুই বোনের শিল্পকর্মে এখন মুগ্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়সহ দেশি-বিদেশি ক্রেতারা। শখের বশে দুই বোনের রং-তুলিতে ক্যানভাস রাঙানোর নৈপুণ্যতা দেখে চিত্রকর্মে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এখানকার অন্য তরুণীরাও। তাদের এই চিত্রকর্ম আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও যাচ্ছে বলে জানান তারা।

প্রতিভাবান এ দুই বোন তাসনিম ও তাফহিম। জেলা শহরের মজুপুরে অবস্থিত তাদের ভাড়া বাসার পড়ার কক্ষটা এখন যেন চারু-কারু শিল্পের এক মিনি প্রতিষ্ঠান। তারা লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের উত্তর মজুপুর এলাকায় ভাড়া করা বাসায় থাকেন। চাকরিজীবি বাবা ফজলুর রহিম মাহমুদের বড় মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা তাসনিম আর ছোট মেয়ে রুবাইয়া আক্তার তাফহিম। তাসনিম লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের একাউন্ডিং বিভাগে আর তাফহিম লক্ষ্মীপুর শ্যামলী আইডিয়াল টেকনিক্যাল কলেজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশুনা করছেন। তাদের মা নাসিমা আক্তার একজন স্কুল শিক্ষিকা। তবে তারা স্থানীয়ভাবে একটা চারু-কারু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন বলে জানান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাসার ড্রয়িং রুমটা যেন চিত্রকর্মের এক্সিবিশন ফ্লোর। পড়ার রুমটা যেন চারু-কারু শিল্পের মিনি প্রতিষ্ঠান। আশে পাশের তরুণীদের চারু-কারু কাজ শিখন শেখানোতে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। শিল্পকর্ম মানেই উচ্চমূল্য। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। শিল্পকলার অনুরাগী হলেও সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয় শিল্পকর্ম সম্পর্কে এমন চলিত ধারণায় ইদানীং পরিবর্তন আসছে।

চিত্রশিল্পী এই দুই বোনের সাথে কথা হলে তারা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা রংতুলির চিত্রকর্ম শিখেছিল ছোটবেলায়। কোন প্রতিষ্ঠানে নয়। দাদার কাছে। এরপর বড়বোনের প্রবল ইচ্ছা শক্তি ও মনোবলে আগ্রহী হয়ে উঠেনে ছোট বোন তাফহিম। দু’বোন মাঝে মধ্যে সময় পেলে টুকটাক আঁকতো। সেগুলো তাদের নিজেদের ঘরে শোভা পেত আর নিজেদের মনের খোরাক মেটাতো। আঁকাআঁকি নিয়ে এ পর্যন্তই থাকতে চেয়েছিল তারা। মূল লক্ষ্য ছিল লেখাপড়ায় উচ্চশিক্ষা আর ভাল চাকরি করার। কিন্তু গেল বছর থেকে মহামারি করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে তারা চিত্রকর্মে মনযোগী হয়ে উঠে। নিজেরা বেশ কিছু কাজ করে এ কাজের একটা ফেসবুক পেজ খুলে সেখানে তা ছড়িয়ে দেয়। তা দেখে মুগ্ধ হয় দেশ-বিদেশের দর্শক। অনলাইনে অর্ডার আসে। এক দুই করে অনেক অর্ডার আসতে থাকে। তারা আরও উদ্বুদ্ধ হয়। বেশ উপার্জনও আসে তাদের। বাড়তে থাকে কাজের পরিধি।

তাদের কাজে একে একে যোগ হয় অয়েল পেইন্টিং, মান্ডালা ড্রয়িং, ডুডল আর্ট, ক্যালিগ্রাফি, ক্র্যাফট ডিজাইন, টাইফোগ্রাফি। টিশার্ট, শাড়ি, বোরকা, জামা ইত্যাদি তাদের রংতুলির শৈল্পিক ছোঁয়ায় হয়ে উঠে মনোমুগ্ধকর। আকৃষ্ট মানুষের সংখ্যা বাড়ে এসবে। আসে অর্ডার। ইতিমধ্যে প্রতিবেশী শিক্ষার্থী ও বেকার তরুণীরা তাদের কাছে চিত্রশিল্পের এ কাজ শেখার আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসে। তারাও রাজি হয়। এরমধ্যে অনলাইনে একটি বিদেশী প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে কেপিআর এ্যাওয়ার্ড আর্ট কম্পিটিশন-২ সম্মাননা সনদ অর্জন করে তারা। আঁকাআঁকিতে তাদের ব্যবহৃত মিডিয়া : আর্কিলিক অন ক্যানভাস।

সম্প্রতি আমেরিকায় তাদের আঁকা ৫টি ছবি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। তাদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এতে মাসিক ৭০-৮০ হাজার টাকা আয় হয় বলেও জানান এ দুই বোন। বর্তমানে নিজেদের বাসার পড়ার কক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে শেখানো হচ্ছে চারু-কারু কাজ। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা বলছেন ব্যাপক উৎসাহ ও স্বপ্ন নিয়ে শিখছেন তারাও। আর চিত্রকর্মের গ্রাহকরা মুগ্ধ হয়ে তাদের এ শিল্পকর্মকে সাধুবাদ জানান।

বেসরকারি এনজিও সংস্থা সিডাব্লিউডিএ’র নির্বাহী পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা পারভীন হালিম জানান, লক্ষ্মীপুরে নারী উদ্যোক্তাদের অভাব রয়েছে। নারীরা নতুন কাজে আগ্রহী হলেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে তেমন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় লক্ষ্মীপুরে একটি লেডিস ক্লাব, নারীদের জন্য শপিংমলসহ নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.