ঢাকায় ডেঙ্গুর সেরোটাইপ-৩: বিসিএসআইআর

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। এতে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ডিইএনভি ৩ অর্থাৎ সোরোটাইপ-৩ এর উপস্থিতি রয়েছে।

আজ রোববার (২৯ আগস্ট) বিসিএসআইআর’র আইএফআরডি অডিটোরিয়ামে জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ।

তিনি বলেন, বিসিএসআইআর-এর জিনোমিক গবেষণাগারে একই সঙ্গে ২০ জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকুয়েন্সিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্লেষণকৃত নমুনাগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়, এই নমুনা ডেঙ্গু ভাইরাসের ডিইএনভি ৩, অর্থাৎ সোরোটাইপ-৩ এর অন্তর্গত।

জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য তুলে ধরে অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস ফ্লাভিভাইরাস গ্রুপের অন্তর্গত একটি পজিটিভ সেন্স আরএনএ ভাইরাস। ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ যা ডিইএনভি ১, ডিইএনভি ২, ডিইএনভি ৩, এবং ডিইএনভি ৪, এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপের মধ্যে ৬৫% -৭০% এমিনো এসিড সিকুয়েন্সের মিল আছে। ভাইরাসটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং মশার মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়।

আফতাব আলী শেখ বলেন, প্রতিবছর বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং এটি বাংলাদেশে সংক্রমিত রোগের মধ্যে অন্যতম। যদিও বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হয়, তবে ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করে।

আইইডিসিআর’র গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের আগে সেরোটাইপ ডিইএনভি ১ এবং ডিইএনভি ২-এর মাধ্যমে মহামারি সংঘটিত হয়, তখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বাকি ২টি সেরোটাইপ শনাক্ত হয়নি। ২০১৭ সালে ডিইএনভি ৩ প্রথম শনাক্ত হয় এবং ২০১৮ সালে ডিইএনভি ৩ এর সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে এবং ২০১৯ সালে এটি মহামারি আকার ধারণ করে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ২৯ জন মারা যান। যদিও ২০১৯ সালে ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি মাত্র নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়, সেখানে সেরোটাইপ-২ শনাক্ত হয়। এবছর এখনও পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জুলাই থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা নির্ধারণের জন্য বিসিএসআইআর-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখের সার্বিক নির্দেশনায় ডেঙ্গু ভাইরাসের নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিং-এর কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। বিসিএসআইআর-এর জিনোমিক গবেষণাগারে একই সঙ্গে ২০ জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকুয়েন্সিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বিশ্লেষণকৃত নমুনাগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়, এই নমুনা ডেঙ্গু ভাইরাসের ডিইএনভি ৩, অর্থাৎ সোরোটাইপ-৩ এর অন্তর্গত।

অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ জানান, ডেঙ্গুর মিউটেশন বিষয়ক উল্লেখ্যযোগ্য গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশন ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যেহেতু নমুনাগুলো শুধুমাত্র ঢাকার একটি হাসপাতাল হতে প্রাপ্ত, সেক্ষেত্রে সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও বেশি সংখ্যক জিনোম সিকুয়েসিং করা প্রয়োজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সী বলেন, ২০১৩ থেকে আমাদের দেশে সেরোটাইপ ১ এবং ২ অনেক ছিল। সেরোটাইপ ৩ এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ধীরে ধীরে ১ এবং ২ শেষ হয়ে গেলো, এখন আবার ৩ এর মাধ্যমে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। তাহলে এই যে জনগোষ্ঠীর যারা ১ এবং ২ -এ আক্রান্ত হয়েছিল, তারা কিন্তু এখন অন্য একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে মানুষের যে হেমারেজ বা শক হয়, আক্রান্ত হওয়ার পর তাতে সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। এটা চিকিৎসকদের জন্য কিন্তু অ্যালার্মিং।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.