ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ট্রলারডুবি: মাঝিসহ আটক ৩, নিখোঁজ অনেক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের লইসক্যা বিলে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় মাঝিসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাতে বিজয়নগর উপজেলার চরইসলামপুর থেকে তাদের আটক করে স্থানীয় জনতা। তারা হলেন- জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ি এলাকার আবজল মিয়ার ছেলে জামির মিয়া (৩৫), কাশেম মিয়ার ছেলে খোকন (২২) ও মৃত আব্দুল করিমের ছেলে রাসেল (১৮)। এদের মধ্যে জামির বালুবোঝাই ট্রলারের চালক। বাকি দুজন তার সহযোগী।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা জানান, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে বালুবোঝাই ট্রলারের চালকসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, এখনো অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে। তবে এই সংখ্যাটি কত হতে পারে তা সঠিক বলা যাচ্ছে না।

এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের উত্তর পৈরতলা গ্রামের ফারুক মিয়ার চার বছরের মেয়ে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তার খোঁজে চাচা শাহিন মিয়া ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, এ পর্যন্ত ২১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। বালুবোঝাই ট্রলারটি পুলিশ আটক করেছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রাতে ১৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম (৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি (১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০), পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)। বাকি তিন জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলার বিজয়নগরে লইস্কা বিলে বালুবোঝাই ট্রলারের ধাক্কায় শতাধিক যাত্রী নিয়ে উল্টে যায় একটি যাত্রীবাহী নৌকা। বিকাল সাড়ে ৪টায় জেলার বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলারটি সদর উপজেলার আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে লইসকা বিল এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি বালুবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ৫০ জন যাত্রী তীরে উঠতে সক্ষম হলেও প্রাণ হারান ২১ জন। আহত অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অন্তত ১৫ জন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.