নানা রেকর্ডের দিনে ব্যাংকের শেয়ার ম্লান কেন?

একাধিক রেকর্ডের দিনে আজ দেশের পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতের শেয়ারের চিত্র ছিল অনেকটাই ভিন্ন। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের শেয়ারে ছিল লাল রঙের ছড়াছড়ি।

আজ সোমবার (৯ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ৫টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা এই খাতের ১৬ শতাংশ মাত্র। অন্যদিকে শেয়ারের দর হারিয়েছে ১৮টি ব্যাংক (৫৮%)। বাকী ৮টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ছিল অপরিবর্তিত।

ডিএসইতে আজ প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩২ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৮ শতাংশ। লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এমন তেজী দিনেও ব্যাংকের শেয়ারের চেহারা এতটা ম্লান ছিল কেন? এই কৌতুহল অসংখ্য বিনিয়োগকারীর।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আজ ব্যাংকের শেয়ারের এই চিত্রের পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করেছে। প্রথমত: বাংলাদেশ ব্যাংক মেয়াদী আমানতের সর্বনিম্ন সুদের হার বেঁধে দিয়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেকটা বেড়ে গিয়ে মুনাফা কমতে পারে বলে অনেক বিনিয়োগকারীর আশংকা। দ্বিতীয়তঃ বাজারে লাগামহীনভাবে দূর্বল মৌল ও স্বল্প-মূরলধনী কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকায়, ব্যাংকের মতো বড় মূলধনের শেয়ার থেকে অনেক বিনিয়োগকারী সাময়িকভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

উল্লেখ, রোববার (৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংক মেয়াদী আমানতের সর্বনিম্ন সুদের হার বেঁধে দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, এখন থেকে ব্যাংকের মেয়াদী আমানতের সুদের হার আগের তিন মাসের গড় মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম হতে পারবে না্। বর্তমানে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে উঠা-নামা করছে। সে হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালন করতে হলে আমানতের সুদ হার ৫ শতাংশের নিচে নামানোর সুযোগ নেই। অথচ বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংক ৩ মাস মেয়াদী আমানতে ৩/৪ শতাংশের বেশি সুদ দেয় না। কোনো কোনো ব্যাংকের সুদের হার ৩ শতাংশেরও কম। এর বিপরীতে ৫ শতাংশ বা তার বেশি হারে সুদ দিতে হলে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় কিছুটা বেড়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বিষয়টি ব্যাংকের মুনাফাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

অন্যদিকে, আমাদের বাজারের সাম্প্রতিক ধারায় দেখা যায়, মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ ৫০/৬০টি কোম্পানির প্রায় সবই স্বল্প মূলধনী কোম্পানি। এদের মধ্যে কোনো কোনোটির মৌলভিত্তিও অনেক খারাপ। উৎপাদন বন্ধ আছে বা সীমিত পরিসরে উৎপাদন চলছে এমন কোম্পানির শেয়ারের দামও একদিনে ৮/৯ শতাংশ করে বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে সূক্ষ্ম কারসাজি থাকতে পারে বলে বাজার বিশ্লেষকদের সন্দেহ। সরাসরি সিকিউরিটিজ আইন লংঘন না করে গুজব ছড়ানোসহ নানা কৌশলে এসব কোম্পানির চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু শেয়ারের যোগান কম থাকায় সহজেই বেড়ে যাচ্ছে দাম। কিন্তু ব্যাংকের মতো বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারে এটা সম্ভব নয় বলে তারা এসব শেয়ার থেকে দূরে থাকছেন।

মূলতঃ এই দুটি বিষয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের শেয়ারের দামে। তবে বিশ্লেষকরা এটাও মনে করেন, আমানতের সুদের বাড়ানোর কারণে সব ব্যাংকের মুনাফায় একইরকম প্রভাব না-ও পড়তে পারে। ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অনেক ব্যাংকই হয়তো বিষয়টি সামলে নিতে পারবে। অন্যদিকে স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলোর বেশিরভাগের শেয়ারের দাম তাদের মৌলভিত্তির তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গেছে। তাই শুধু মূলধনী মুনাফার (Capital Gain) আশায় অন্ধভাবে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীদের অনেকে বড় ক্ষতির মুখেও পড়তে পারেন। কারণ কোনো শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে বড় আকারের মূল্য সংশোধন অনিবার্য হয়ে উঠে। এসব শেয়ারে আটকে গেলে লভ্যাংশ দিয়ে পুষিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না। তাই সব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.