আমাকে নিয়ে একটা ‘সস্তা’ ষড়যন্ত্র চলছে: মাসরুর আরেফিন

চিত্রনায়িকা পরীমণিকে জড়িয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন। বিএসইসি আয়োজিত বিনিয়োগ রোড শো-তে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকার পথে রয়েছেন উল্লেখ করে রবিবার (৮ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাতে (বাংলাদেশ সময়) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তাকে জড়িয়ে প্রকাশিত সংবাদকে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন এই ব্যাংকার ও লেখক।

প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়েছে, ‘একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে পরীমণির অডিও রেকর্ডে একটি গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথোপকথনে উঠে এসেছে।’

এই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেছেন, আমি এই মর্ত্যের পৃথিবীতে, এই ধরাধামে পরীমণি নামের কাউকে দেখিনি। অতএব তার নম্বর আমার কাছে থাকার প্রশ্নই আসে না। এমনকি বোট ক্লাবের ঘটনার আগ পর্যন্ত পরীমণির নামটাও শুনিনি। আমার তখন মানুষকে জিজ্ঞাসা করতে হয়েছিল যে, কে এই পরীমণি?

মাসরুর আরেফিন দাবি করেছেন, তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাংকিং আর তারপর সাহিত্য নিয়ে পড়ে থাকেন। তার ভাষ্য, ঢাকার কেউ (যারা ক্লাবে যান তাদের কেউও) বলতে পারবেন না তারা আমাকে কোনোদিন কোনও ক্লাব বা পার্টিতে দেখেছেন (এখানে আমি ক্লাব বা পার্টিতে যাওয়ার নিন্দা করছি না, সেটা যারা যাবার তারা যেতেই পারেন; আমি শুধু বোঝাচ্ছি যে মানুষ হিসাবে আমার টাইপটা কী)। এতটাই অফিস ও ঘরমুখী এক মানুষ আমি। অতএব বলছি, পরীমণিকে গাড়ি দেওয়ার কথাটা আমার কানে লেগেছে মঙ্গল গ্রহের ভাষায় বলা কিছুর কথার মতো।

মাসরুর আরেফিনের নিজেরই কোনও গাড়ি নেই দাবি করে তিনি লিখেছেন, ব্যাংক আমাকে চলার জন্য গাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে, তাতেই চড়ি। ব্যাংকের চাকরির শেষে নিশ্চয়ই কোনও ব্যাংক থেকে কার লোন নিয়ে একটা গাড়ি কিনে তাতে চড়বো। কোনও অভিযোগের মধ্যে মিনিমাম এক সুতো সত্য থাকতে হয়। কিন্তু এ এক ভয়ঙ্কর বিষয় যে, আমি যাকে চিনি না, জীবনে যার বা যাদের সঙ্গে হ্যালো বলা দূরে থাক, যাদের নামটা পর্যন্ত আমি প্রথম জানলাম এই কদিন আগে, সেই নায়িকা বা মডেলকে আমি গাড়ি দিয়ে ফেললাম? কোথায় যোগাযোগ হলো আমাদের? ফোন কল? তার নাম্বার কী? কল রেকর্ড আনা হোক।

এই সংবাদের নেপথ্যে মাসরুর আরেফিন, সিটি ব্যাংক এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর ‘সস্তা ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তার কথায়, আমি সত্যি জানি না, ঘটনা কী। বুঝি যে, আমাকে নিয়ে (অর্থাৎ এক অর্থে সিটি ব্যাংক নিয়ে) একটা ‘সস্তা’ ষড়যন্ত্র চলছে।

খবরে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নামটিও সঠিক লেখা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইত্তেফাক-এর খবরে দেখেন, ওরা সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যানের নামটা পর্যন্ত লিখতে পারেনি। লিখেছে ‘ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত রুবেলের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি…’ শওকত রুবেল নামের মানুষটা কে? এই নামে তো কেউ নেই। সাংবাদিক ভাইয়েরা, কী লিখেছেন আপনারা এসব? মানুষ ও তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন আপনাদের কাছে এতই ফেলনা যে, নামটাও ঠিক জেনে লিখবেন না? প্রিয় ইত্তেফাক, আমার ব্যাংকের চেয়ারম্যানের নাম আলাদা। সেটা শওকত রুবেল না ’

তিনি লিখেছেন, ‘আমার অনুমান এই যে, ব্যবসায়ী জনাব শওকত আজিজ রাসেল আমাদের ব্যাংক চেয়ারম্যানের ছোট ভাই। একটা গোষ্ঠী তার হয়তো ক্ষতি চায়, এবং তারা তাদের সেই চাওয়ার সঙ্গে তাকে সিটি ব্যাংক চেয়ারম্যান ভেবে নিয়ে ব্যাংক প্রধান হিসেবে আমাকেও নিষ্ঠুর ও বাছবিচারহীন এক সামাজিক নর্দমার মধ্যে ঠেলে দিতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন না।

নিজের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাসরুর আরেফিন লিখেছেন, ‘তারা (প্রতিবেদক) বুঝলেন না যে, ‘আগস্ট আবছায়া‘ (বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপরে চার বছরের গবেষণার শেষে লেখা আমাদের অন্যতম এক প্রধান উপন্যাস), ‘আলথুসার‘ বা ‘আন্ডারগ্রাউন্ড‘ নামের উপন্যাসের লেখকের, বাংলায় ‘ফ্রানৎস কাফকা গল্পসমগ্র‘ কিম্বা ‘হোমারের ইলিয়াড‘-এর এই অনুবাদকের এক পয়সা দুর্নীতির টাকাও থাকতে পারে না যা দিয়ে তিনি নিজের জন্য- ব্যাংক লোন নেওয়া ব্যতিরেকে একটা বিলাসী বা ভাল গাড়ি কিনতে পারেন। অন্যকে কিনে দেওয়ার কথা বাদই দিন।

সামাজিক ‘বোঝাপড়ার’ বিষয়টি ছাড়াও এই প্রতিবেদনের আইনি বিষয়েও লিখেছেন তিনি। তিনি মনে করেন দুটি বিষয় ‘বেশ গুলিয়ে যাচ্ছে’। তার কথায়, ‘আমার কাউকে কোনও গাড়ি দেওয়ার সামর্থ্য নেই। কিন্তু ধরুন, কাউকে আমার ভালো লাগলো (যার সম্ভাবনা বাস্তবে কম, কারণ আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে এক সুন্দর সংসার আছে), তখন তাকে যদি আমি আমার সামর্থের মধ্যে দুই বক্স চকলেটও কিনে দিই, সেটা নিয়ে আইন ছাপিয়ে, সংবিধানের মৌলিক অধিকার ছাপিয়ে ‘সমাজের বিচার’ নামের যে-এক ড্রাগন আছে, সে এই সোশাল মিডিয়ার যুগে হাউ-হাউ করে উঠবে।

পরীমণি বা বর্তমান সময়ে আলোচনায় থাকা মডেলদের কাউকে কখনো দেখেননি পুনরোল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এখন তাহলে এক ব্যক্তির ওপরে, এক সাধারণ মানুষের ওপরে, এক লেখক ও কবির ওপরে, এক ‘কেউ-না এমন এক মানুষের ওপরে’ অবিচারের মাত্রাটা বুঝুন। বাকি বিচার এই সমাজের, সমাজই যেহেতু আছে বিচারকের ভূমিকায়।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.