মেঘনায় মিলছে না ইলিশ

লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে শূন্য হাতে অনেক জেলে ডাঙ্গায় ফিরে আসছে। এতে করে স্থানীয় অর্ধ লক্ষাধিক জেলে সম্প্রদায়ের দিন কাটছে চরম হতাশায়। পরিবার পরিজন নিয়ে এখন ভালো নেই তারা। এছাড়া কোন সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে জেলেদের।

এদিকে নদীতে ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে এ বছর অতি খরা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নাব্যতা সংকটকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিশাল সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকায় অন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।

জানা গেছে, জেলা মৎস্য অফিসের তালিকা অনুযায়ী লক্ষ্মীপুর জেলায় মোট ৪৩ হাজার ৩৪৪ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার জেলে চাল পাচ্ছে। তবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ জেলায় আড়তদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীসহ অর্ধ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী জেলে ও মৎস্যজীবী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলায় চলতি বছর ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এখানকার ইলিশ সুস্বাদু হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট, কমলনগরের মতির হাট, বাত্তির ঘাট, রামগতির ঘাটসহ বেশ কয়েকটি মাছ ঘাট ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই। এসব এলাকার উক্ত ঘাটগুলোতে প্রতি বছর এ সময়ে মৎস্যজীবী জেলে আড়তদার ও ক্রেতারা ইলিশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন বলে জানান স্থানীয়রা। ইলিশের ভরা মৌসুমে এসে এবার ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে এসব এলাকায়। আড়তদারদের কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন এখন। আবার কেউ অন্য ছোট মাছ বিক্রি করতেছে। এসব এলাকার জেলেরা নৌকা, ট্রলার ও জাল নিয়ে নদীতে যাওয়ার প্রস্তুতি আর নদীতে অবস্থানের দৃশ্যও চোখে পড়ে। তবে তাদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না বলে জানান তারা।

স্থানীয় জেলেরা জানান, প্রতিদিন ভোরে একটি ট্রলারে ৮ থেকে ১০ জন করে জেলে জাল নিয়ে নদীতে যান। ট্রলারের তেল ও নিজেদের খাবারে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয় তাদের। কিন্তু নদীতে ফেলা তাদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না এবার। এতে করে খরচ উঠাতেও হিমশিম খেতে হয় তাদের। আবার কেউ কেউ বলেন, ধার দেনা করে নদীতে এসে মাছ না পেয়ে ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে এখন। কারো কারো অভিযোগ নদীতে মাছ নেই, চলমান লকডাউনেও কাজ নেই, ঘরে চাল-ডাল নেই, সরকারি ত্রাণও মিলছে না তাদের। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে থাকতে হয় অনেককে।

তবে স্থানীয় আড়তদাররা জানান, অন্যবারের তুলনায় ইলিশ মাছ একেবারেই কম। অনেক জেলে নদী থেকে শূন্য হাতে ফিরছে। কেউ কেউ দু-চারটি ইলিশ নিয়ে ফিরলেও খরচ পোষায় না। দু-চারটি ইলিশ দেখা গেলেও অন্যবারের তুলনায় ইলিশ একেবারেই নেই বললেই চলে। যা আসে তার মধ্যে বড় ইলিশ ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা কেজি, মাঝারিটা ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা, ছোট ইলিশ ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তারা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। এর কারণ হলো এ বছর অতি খরা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও নদীতে নাব্যতা সংকট রয়েছে তাই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ভালো ইলিশ পাওয়া যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

চলমান পরিস্থিতিতে অর্ধ লক্ষাধিক জেলে সম্প্রদায়ের দুর্দিনের কথা স্বীকার করে তিনি আরও জানান, জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দু’টি (টেকসই ব্যবস্থাপনা ও ইলিশ উন্নয়ন )প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন হলে তাদের শুধু নদীর মাছের উপরই নির্ভর থাকতে হবে না। তাদের জীবন বদলে যাবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.