রাজশাহীতে আক্রান্তদের ৪০ ভাগই শ্রমজীবী, ছড়িয়েছে গ্রামাঞ্চলেও

মহামারি করোনা ভাইরাস উচ্চবিত্তের অসুখ; যারা এসি রুমে থাকেন, তারাই আক্রান্ত হন এ রোগে—এমন ধারণা পোষণ করেন অনেক সাধারণ মানুষ। কিন্তু, তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে রাজশাহীতে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এমনকী গ্রামের মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন এই ব্যাধিতে। মারা যাচ্ছেন তরুণ-যুবকেরাও।

দেশে করোনার অন্যতম হটস্পট এখন রাজশাহী। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে নগরীতে চলছে লকডাউন। এরপরও জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রয়েছেন নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ। করোনা যে তাদেরও আক্রান্ত করতে পারে, এমন আশঙ্কা পোষণ করেন না তারা। তবে বাস্তবতা দেখাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।

শ্রমজীবী ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত এসব মানুষের ধারণা ভুল প্রমাণ করে করোনায় আক্রান্ত নিম্নআয়ের অনেকেই এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। চিকিৎসা নিচ্ছে গ্রামের মানুষও। তাদের অধিকাংশকে এখন অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, এবারে করোনার যে ডেল্টা ভ্যারিয়্যান্ট, সেটি কাউকে মানছে না। হাসপাতালে আগে আমরা দেখেছি গ্রামের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেননি। নিম্নআয়ের মানুষের দেহে আগে করোনা ভাইরাস ছিল না। এখন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে যারা ভর্তি আছে, তাদের ৪০ ভাগই গ্রামের মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ। আগে এই শ্রেণির মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতোই না। এই শ্রেণির মানুষ এখনও মনে করে, তাদের করোনা হয় না। ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায়। মাস্ক পরে না। স্বাস্থ্যবিধি মানে না।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট কাউকেই ছাড়ছে না। উচ্চবিত্ত বা একেবারে নিম্নবিত্ত হোক, যে বয়সেরই হোক, সবাইকে এখন সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। না মানলে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনব।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন তরুণ ও যুবকেরা। আগে সাধারণত বেশি বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতেন। এই ধারাও পরিবর্তন হচ্ছে। যারা কম বয়সী, তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে এই হাসপাতালে মারা গেছেন ১৪৮ জন। মঙ্গলবার সকাল থেকে আগের ২৪ ঘন্টায় মারা যাওয়া ১২ জনের মধ্যে তিনজনই তরুণ, যাদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। রামেক হাসপাতালে করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন।

এদিকে, আজ বুধবার (১৬ জুন) সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৮ জন। রামেকের করোনা ইউনেটের ৩০৫ বেডের বিপরিতে ৩৪৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় শঙ্কিত স্থানীয় প্রশাসনও। এই সংক্রমণ ঠেকানোর পরিকল্পনা করতে জরুরি বৈঠক ডেকেছে জেলা প্রশাসন। সে বৈঠকে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

তিনি জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর সার্কিট হাউজে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে লকডাউন শহরের বাইরে দেওয়া হবে কিনা।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.