নানা ছাড়ের পরও বেড়েছে খেলাপি ঋণ

করোনাভাইরাস অতিমারিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণের কিস্তি পরিশোধে নানা ছাড় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। নানা ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি চলছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ-এই তিন মাসে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতের বিতরণ করা মোট ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা।

তিন মাস আগে গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।

গত বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ ছিল ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। মার্চের তুলনায় খেলাপির অঙ্ক বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ঋণগ্রহীতাদের বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ ও ঋণের কিস্তি পরিশোধে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

এগুলো পরিশোধে ব্যর্থ হলেও কোনো ঋণকে খেলাপি করা হয়নি। বর্তমানেও অনেক ঋণের বিপরীতে কিস্তি পরিশোধে ছাড় বহাল রয়েছে। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে খেলাপি করার ক্ষেত্রেও অনেক ঋণে ছাড় বহাল রয়েছে।

তবে কিছু খাতে গত ১ জানুয়ারি থেকে কিস্তি পরিশোধ না করলে খেলাপি করা হচ্ছে। এ কারণে গত তিন মাসেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৪৫ হাজার ৯০ কোটি টাকা খেলাপি। বিদেশি ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এছাড়া বিশেষায়িত ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান।

ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৯৮ শতাংশই বা ১ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে।

এদিকে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় খেলাপিদের জন্য বরাবরই বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বছর ঋণ পরিশোধ না করেও বিশেষ সুবিধায় যারা খেলাপি হননি, তাদের জন্য নতুন করে সুবিধা দিয়ে ২৪ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেসব চলমান ঋণের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং নতুন করে নবায়ন করা হয়নি, এসব ঋণের শুধু সুদ পরিশোধ করলেই ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নিয়মিত রাখতে হবে।

এছাড়া যেসব গ্রাহকের ২০২০ সালের সুদ বকেয়া রয়েছে, তাদের চলতি বছরের মার্চ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৬টি কিস্তির ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে পারবেন।

একই সঙ্গে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত যে সুদ আসে, তা-ও ত্রৈমাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। আগে চলমান ঋণের কিস্তি প্রতিমাসে পরিশোধ করতে হতো।

এছাড়া তলবি ঋণ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮টি ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। এভাবে শোধ হলে খেলাপি করা যাবে না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.