৫০ বছরে বাজেট বেড়েছে ৭৬৮ গুণ

জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মানুষের জীবন-জীবিকার রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের বাজেট হবে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার। যা স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রথম বাজেটের আকারের চেয়ে ৭৬৭ দশমিক ৯৬ গুণ বড়।

দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই বাজেটের আকার বাড়ছে। ১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাজেটে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। বাজেটের আকার বাড়লেও তা পুরোপুরি খরচ হচ্ছে না। প্রতি বছরই গড়ে ফেরত যাচ্ছে ২০ শতাংশ অর্থ। স্বাধীনতা পরবর্তী ১১ জন অর্থমন্ত্রী, আর দুই উপদেষ্টার দেয়া ৫০টি বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার সুযোগ পেয়েছিলেন সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই দুজনই ১২টি করে বাজেট উপস্থাপন করেন।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। ৭৮৬ কোটি টাকার এই বাজেট ছিল বিদেশি অনুদান ও ঋণ নির্ভর। একই দিন তিনি ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ সালের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।

প্রথম বাজেটের পর ১ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন বছর। আর তা ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হতে লেগে গেছে ১৪ বছর। এরপর ২১ বছর পর এক লাখ কোটিতে উন্নীত হয় বাজেটের আকার। ২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করে। এর ১০ বছরের মাথায় এবার একই সরকার ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজেটের ইতিহাসে বিএনপির অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান তিন মেয়াদে দিয়েছেন এক ডজন বাজেট। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে সাইফুর রহমানের প্রথম বাজেট ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকার। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে তার হাত ধরেই খরচের পরিকল্পনা দাঁড়ায় ৬৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকায়।

তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বাজেট দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ১৯৯৬-৯৭ থেকে ২০০১-০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ছয় বছর সরকারি আয়-ব্যয় পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন তিনি।

এদিকে এরশাদ সরকারের হয়ে ২টি বাজেট দেয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগ সরকারে এসে টানা ১০টি বাজেট দেন। তার নেতৃত্বে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মত ২ লাখ কোটির অংক ছাড়ায় বাংলাদেশের বাজেট। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

এরপর বাজেট বড় করার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও। বৃহস্পতিবার তিনি পেশ করতে যাচ্ছেন নিজের ধারাবাহিক তৃতীয় বাজেট।

এক নজরে ৫০টি বাজেটের আকার ও বাজেট পেশকারীর নাম

১. ১৯৭২-৭৩, তাজউদ্দীন আহমদ, ৭৮৬ কোটি টাকা।

২. ১৯৭৩-৭৪, তাজউদ্দীন আহমদ, ৯৯৫ কোটি টাকা।

৩. ১৯৭৪-৭৫, তাজউদ্দীন আহমদ, ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা।

৪. ১৯৭৫-৭৬, ড. আজিজুর রহমান, ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা।

৫. ১৯৭৬-৭৭, জিয়াউর রহমান, ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা।

৬. ১৯৭৭-৭৮, লে. জিয়াউর রহমান, ২১৮৪ কোটি টাকা।

৭. ১৯৭৮-৭৯, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, ২৪৯৯ কোটি টাকা।

৮. ১৯৭৯-৮০, ড. এম এন হুদা, ৩৩১৭ কোটি টাকা।

৯. ১৯৮০-৮১, এম সাইফুর রহমান, ৪১০৮ কোটি টাকা।

১০. ১৯৮১-৮২, এম সাইফুর রহমান, ৪৬৭৭ কোটি টাকা।

১১. ১৯৮২-৮৩, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪৭৩৮ কোটি টাকা।

১২. ১৯৮৩-৮৪, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৫৮৯৬ কোটি টাকা।

১৩. ১৯৮৪-৮৫, এম সাইদুজ্জামান, ৬৬৯৯ কোটি টাকা।

১৪. ১৯৮৫-৮৬, এম সাইদুজ্জামান, ৭১৩৮ কোটি টাকা।

১৫. ১৯৮৬-৮৭, এম সাইদুজ্জামান, ৮৫০৪ কোটি টাকা।

১৬. ১৯৮৭-৮৮, এম সাইদুজ্জামান, ৮৫২৭ কোটি টাকা।

১৭. ১৯৮৮-৮৯, মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম, ১০৫৬৫ কোটি টাকা।

১৮. ১৯৮৯-৯০, ড. ওয়াহিদুল হক, ১২৭০৩ কোটি টাকা।

১৯. ১৯৯০-৯১, মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম, ১২৯৬০ কোটি টাকা।

২০. ১৯৯১-৯২, এম সাইফুর রহমান, ১৫৫৮৪ কোটি টাকা।

২১. ১৯৯২-৯৩, এম সাইফুর রহমান, ১৭৬০৭ কোটি টাকা।

২২. ১৯৯৩-৯৪, এম সাইফুর রহমান, ১৯০৫০ কোটি টাকা

২৩. ১৯৯৪-৯৫, এম সাইফুর রহমান, ২০৯৪৮ কোটি টাকা।

২৪. ১৯৯৫-৯৬, এম সাইফুর রহমান, ২৩১৭০ কোটি টাকা।

২৫. ১৯৯৬-৯৭, এস এ এম এস কিবরিয়া, ২৪৬০৩ কোটি টাকা।

২৬. ১৯৯৭-৯৮, এস এ এম এস কিবরিয়া, ২৭৭৮৬ কোটি টাকা।

২৭. ১৯৯৮-৯৯, এস এ এম এস কিবরিয়া, ২৯৫৩৭ কোটি টাকা।

২৮. ১৯৯৯-০০, এস এ এম এস কিবরিয়া, ৩৪২৫২ কোটি টাকা।

২৯. ২০০০-২০০১, এস এ এম এস কিবরিয়া, ৩৮৫২৪ কোটি টাকা।

৩০. ২০০১-২০০২, এস এ এম এস কিবরিয়া, ৪২৩০৬ কোটি টাকা।

৩১. ২০০২-২০০৩, এম সাইফুর রহমান, ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা।

৩২. ২০০৩-২০০৪, এম সাইফুর রহমান, ৫১৯৮০ কোটি টাকা।

৩৩. ২০০৪-২০০৫, এম সাইফুর রহমান, ৫৭২৪৮ কোটি টাকা।

৩৪. ২০০৫-২০০৬, এম সাইফুর রহমান, ৬১০৫৮ কোটি টাকা।

৩৫. ২০০৬-২০০৭, এম সাইফুর রহমান, ৬৯৭৪০ কোটি টাকা।

৩৬. ২০০৭-২০০৮, এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (অর্থ উপদেষ্টা)।

৩৭. ২০০৮-২০০৯, এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (অর্থ উপদেষ্টা)।

৩৮. ২০০৯-২০১০, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা।

৩৯. ২০১০-২০১১, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ১৩২,১৭০ কোটি টাকা।

৪০. ২০১১-২০১২, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ১৬৫,০০০ কোটি টাকা।

৪১. ২০১২-২০১৩, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।

৪২. ২০১৩-২০১৪, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

৪৩. ২০১৪-২০১৫, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

৪৪. ২০১৫-২০১৬, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

৪৫. ২০১৬-২০১৭, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

৪৬. ২০১৭-২০১৮, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা।

৪৭. ২০১৮-২০১৯, আবুল মাল আবদুল মুহিত, ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

৪৮. ২০১৯–২০২০, আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

৪৯. ২০২০-২০২১, আ হ ম মুস্তফা কামাল, ৫ রাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

৫০. সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা উপস্থাপন করছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.