সোহরাওয়ার্দীর গাছ কাটা নিয়ে ২ মামলার শুনানি হাইকোর্টে মুলতবি

ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করায় সরকারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দাখিল করা আদালত অবমাননার মামলা এবং গাছ কাটা বন্ধের রিট আবেদনের ওপর শুনানি মুলতবি করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেলের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার (২০ মে) পৃথক পৃথকভাবে এ আদেশ দিয়েছেন।

আদালত অবমাননার মামলার শুনানি ২ সপ্তাহ মুলতবি করেছেন বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আর গাছ কাটা বন্ধ চেয়ে ৬টি সংগঠন ও এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের শুনানি ৪ সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে আইজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাহেরুল ইসলাম ও সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আদালত অবমাননার মামলার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আর রিট আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল ও অ্যাডভোকেট সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান।

শুনানিকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা চাই সেখানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) গাছও থাকবে। আর হাইকোর্টের আগের রায়ের নির্দেশনা অনুসারে কাজও হবে। আর একটা কথা, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, সরকার এটা নিয়ে পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান চান। আমরাও চাই, সমস্যার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি হোক। অন্যথায় যারা সংক্ষুব্ধ তারা যেকোনো সময়ই আদালতে আসতে পারবেন।

আদালত অবমাননার মামলা
‘ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো সেখানে গাছ কেটে রেস্টুরেন্ট ও দোকান বানাচ্ছে’-এই অভিযোগে সরকারের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী মো. শামিম আখতার এবং প্রধান আর্কিটেক্ট অব বাংলাদেশ মীর মনজুর রহমানের বিরুদ্ধে এই আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমাকে জানিয়েছেন যে, এখন গাছ কাটা হচ্ছে না। তিনি পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসতে চান। বসেই সমাধান করতে চান। এজন্য একমাস সময় চাচ্ছি। এ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখা হোক।

এই আবেদনের বিরোধিতা করে মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত একটি রুল জারি করুন। অ্যাটর্নি জেনারেল যেহেতু বলছেন তাকে মন্ত্রী বলেছেন যে সবাইকে নিয়ে বসতে চান। তাহলে আদালত সময়ে দিতে পারেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে নিশ্চিত করবেন যে আর কোনো গাছ কাটা হবে না। এসময় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাহাস শুরু হয়। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর আদালত বলেন, যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন যে তারা বসতে চান। তাহলে আমরা শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি রাখছি।

ছয় সংগঠনের রিটের শুনানি
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল নকসার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাপনা উচ্ছেদ, উদ্যান সংরক্ষণ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মূলরুপে রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে পরিবেশবাদী ছয়টি সংগঠন ও এক ব্যক্তি। এ আবেদনের ওপর বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা একটার দিকে শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে শুনানি একমাস মুলতবি রাখার আবেদন জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রী পরিবেশবাদীদের সঙ্গে বসে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চান।

সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, এর আগেও মন্ত্রী বলেছিলেন যে আমাদের সঙ্গে ১১ মে বসবেন। কিন্তু বসেননি। সুতরাং এই মুহুর্তে গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিন এবং রুল জারি করুন। জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মন্ত্রী মহোদয় নিজেই বলেছেন যে গাছ কাটা বন্ধ আছে। আপাতত গাছ কাটবে না।

এসময় আদালত রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। যেহেতু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনাদের নিয়ে বসতে চাচ্ছেন। আমরাও চাই আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান হোক। আপনারা সামনাসামনি বসুন। সকলে মিলে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান করুন। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা উল্লেখ করে আদেশ দিচ্ছি। চার সপ্তাহ মুলতবি রাখছি।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.