সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব আয়ে চলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। ব্যাংক-বীমা, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন খাতের এসব প্রতিষ্ঠানকে বছরের পর বছর অর্থ দিতে হবে-এটা আর চলবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সরকার এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজি দিয়েছে। ব্যবস্থাপনার অন্যান্য সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন তাদের দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন থেকে সরকারি কোম্পানিগুলোকে নিজস্ব আয়-ব্যয়ে চলতে হবে।

আজ মঙ্গলবার (০৪ মে) অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন তিনি। শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনে কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনান্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে অনলাইনে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনেকেশন কোম্পানি লিমিটেড ( বিটিসিএল) প্রসঙ্গে সরকারি সব কোম্পানির জন্য নিজস্ব-আয়ে ব্যয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে এডিপির অধীনে অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে ওই নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, কত দিন এভাবে ক্ষতিপূরণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। বিটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নিজস্ব ব্যয়ে নির্বাহের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছে। তবে আপতত শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শক্তিশালী টেলিনেটওয়ার্ক না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হয়। শেষ পর্যন্ত সামান্য সুদে প্রকল্পটির জন্য ৯৫ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে।

কীভাবে সরকারি কোম্পানিগুলো নিজেরা নিজেদের আয় দিয়ে চলবে, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোম্পানিগুলোকে সব কিছু দেওয়া হয়েছে। ব্যবসার পলিসি তারা ভালো জানে, ব্যবসার পলিসি খাটিয়ে কোম্পানিগুলো আয় করে নিজেরা চলবে। কোম্পানিগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে সরকার দিয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।

এম এ মান্নান আরও বলেন, এদের (সরকারি কোম্পানি) মুখ থেকে ফিডার খুলে না নিলে এরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। আমি চাই এদের সরকারি ঋণ বা অনুদান দেওয়া বন্ধ হোক। এভাবে বছরের পর বছর চলতে পারে না। কোম্পানিগুলোকে দ্রুত সময়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানো উচিত।

আজকের একনেক সভায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- ১ হাজার ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা খরচে ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ’ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা খরচে ‘তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকার পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্প।

একনেক সভায় প্রকল্প দুটির বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে খাল খননের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবধান হতে সংশ্লিষ্টদের হুঁশিয়ার করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সাবধান! খাল খননের নামে যেসব কাণ্ড হয়! এটা তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জানেন। আমরাও সবাই মোটামুটি জানি। তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, সেচে সেচে উপরের দিকে দেখিয়ে…। মানে দেখাবার একটা প্রবণতা আছে। সেদিকে আমাদের তিনি সাবধান করেছেন।

আজ একনেক সভায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন’ প্রকল্পের সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দুটোই বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ১৯৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিএসএমএমইউয়ের কাজ শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলছে এটা, তাড়াতাড়ি শেষ করুন। আর কত দিন নেবেন?

উপজেলা পর্যায়ে যেসব স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল নামে যে স্টেডিয়ামগুলো করা হবে, সেখানে তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। নো রিজার্ভ। কোনো ক্লাবের বা ব্যক্তির আওতায় থাকবে না। ইউএনওরা দেখভাল করতে পারবেন। কিন্তু সবাই খেলার অধিকার পাবে। সেটা উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং বসার জায়গাও রাখতে হবে। এভাবে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চাচ্ছেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.