মির্জা আব্বাসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএনপি

‘নিখোঁজ বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার পেছনে দলের নেতারা জড়িত আছেন’- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দেওয়া এমন বক্তব্যের ব্যাখা চেয়ে দলের পক্ষ থেকে তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। বিএনপির কয়েকটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে দলীয়ভাবে ‘অতি-গোপনীয় ও সেনসেটিভ হওয়ার’ কারণে কোনও নেতাই এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের ৯ বছর উপলক্ষে গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চিঠি দেওয়া হয়েছে মির্জা আব্বাসকে। বৃহস্পতিবার চিঠি ইস্যু করা হয়। আজই তার কাছে এ চিঠি পৌঁছানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, আপনি তো জেনেই ফেলেছেন, তাহলে আমার কাছে জানতে চাইছেন কেন। কী জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না, আপনি খুঁজে বের করুন। আমি কোনো মন্তব্য করব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, ইলিয়াস আলী গুমসহ সারা দেশে বিএনপির অন্তত চার শতাধিক নেতাকর্মী গুমের পেছনে গত ১০ বছর ধরে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিই অভিযোগ করা হয়েছে। অনেকটা হঠাৎ করে ‘নতুন তথ্য’ সামনে আনলেন মির্জা আব্বাস। দলের ‘পলিসি মেকার’ হিসেবে তার বক্তব্য বিগত দিনে দলের অবস্থানকেই প্রথমত অভিযুক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই গুম-খুনের পেছনে বর্তমান সরকারকেই দায়ী করে আসছে। সেদিক থেকেও আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে মির্জা আব্বাসের অবস্থান বিএনপির দলীয় কোনও অবস্থান নয়, এই বার্তা দিতেই তাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্যের যুক্তি, মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পর যদি দলীয়ভাবে অবস্থান স্পষ্ট না করা হয়, তাতে অন্য সিনিয়র নেতাদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দুই ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও শওকত মাহমুদকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। সেদিক বিবেচনায় নিয়েও মির্জা আব্বাসের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মেলনী-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ইলিয়াস আলী গুমের পেছনে আমাদের দলের যে বদমাশগুলো রয়েছে তাদেরকেও চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করেন প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন। ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিলেন তাকে। সেই বিষধর সাপগুলো এখনও আমাদের দলে রয়ে গেছে। যদি এদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে না পারি, সামনে যাওয়া যাবে না।’

অবশ্য পরদিন রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সুর পাল্টিয়ে রাজধানীর শাহজাহানপুরে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কাটপিস করে ইচ্ছেমতো আমার বক্তব্যকে ব্যবহার করা হয়েছে। কী কারণে করা হয়েছে আমি জানি না। এমন কোনো কথা বলিনি, যার জন্য আমাকে বিব্রত হতে হবে। সরকার বা আওয়ামী লীগ ইলিয়াস আলীকে গুম করেনি- এমন কথা আমি বলিনি। আমার কথা বিকৃত করে লেখা হয়েছে।’

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.