দেশে নতুন দরিদ্র হয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ

করোনা মহামারির আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এ জরিপে।

গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। এ বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

‘পোভার্টি ডায়নামিকস অ্যান্ড হাউসহোল্ড রিয়েলিটিস’ শীর্ষক এই জরিপের (প্রথম পর্ব) ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিন।

অনুষ্ঠানে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোভিডের আঘাত সব জায়গায় একইভাবে অনুভূত হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে তার প্রভাব কমই দেখা গেছে। সে কারণে শহরের বস্তিবাসীর জীবন গ্রামের শ্রমজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি অরক্ষিত।

জরিপের তথ্য থেকে তিনি জানান, গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান, যাদের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো ফেরেনি। প্রাক-কোভিড সময়ের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীর আয় কমলেও খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় গত জুনের তুলনায় এ বছরের মার্চে দ্বিগুণ হয়েছে।

তিনি মনে করেন, ভাড়া বাড়িতে থাকা অধিকাংশ শহুরে দরিদ্রের জন্য এটি নির্মম বাস্তবতা। সবার সঞ্চয় কমেছে আশ্চর্যজনকভাবে। অরক্ষিত অদরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন শ্রেণির মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থার চেয়ে নিচে নেমে গেছে। একই সঙ্গে সব শ্রেণিতেই ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের হার সামগ্রিকভাবে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে দেশের কৃষি খাত অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে বলে উল্লেখ করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, কেবল কৃষক ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী বাকি সব পেশার মানুষের আয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কমেছে। কিন্তু পুনরুদ্ধারের কথা যখন বলা হয়, তখন মূলত সামষ্টিক অর্থনীতির বড় বড় খাত, যেমন তৈরি পোশাক খাতের কথাই উল্লেখ করা হয়। জাতীয় পরিসরে কৃষির কথা সেভাবে উচ্চারিত হয় না।

অনুষ্ঠানে ইমরান মতিন নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ কম, এই করোনা পরিস্থিতিতে নারীরা শ্রমবাজার থেকে আরও দূরে ছিটকে পড়তে পারেন। তিনি আরও বলেন, পেশা পরিবর্তন করে দিনমজুরের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গ্রহণ করায় দরিদ্রদের দুরবস্থা আরও বাড়ছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.