মামুনুলের ‘শ্বশুরকে’ শোকজ করলো আ. লীগ

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

সোমবার (১২ এপ্রিল) ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এ নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি মো. ওয়ালিয়ার রহমান, গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। আপনার বড় জামাতা মো. হাবিবুর রহমান, মেজ জামাতা অর্থাৎ জান্নাত আরা ঝর্ণার সাবেক স্বামী মো. জাফর শহিদুল ইসলাম, সর্বাধিক সমালোচিত আপনার মেজ মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার কথিত স্বামী মো. মামুনুল হকসহ সবাই উগ্রপন্থী ইসলামি সংগঠনের (হেফাজতে ইসলাম) সঙ্গে জড়িত। আপনার মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণা অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত। এমনকি আরও জানা যায় যে, আপনার স্ত্রীও জামায়াতপন্থী।’

নোটিশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃদ্বয় বলেন, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে পরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয় কখনো দলীয় নেতাদের জানাননি ওয়ালিয়ার রহমান। তাই তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওয়ালিয়ার রহমানকে কেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার স্বপক্ষে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই নোটিশে।

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। শুরু থেকেই ওই নারীকে তার ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হিসেবেই দাবি করে আসছিলেন মাওলানা মামুনুল হক। যদিও এর স্বপক্ষে কোনও নথিপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

তবে সেই নারীর পরিচয় প্রকাশ পেতে খুব একটা সময় লাগেনি। ওই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা (৩০)। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ওলিয়ার রহমান ওরফে ওলি মিয়ার মেজো মেয়ে তিনি। ওলিয়ার রহমান গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

রিসোর্টকাণ্ডের পর একের পর এক মামুনুলের ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে শোনা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। এছাড়া তিনি রিসোর্টে স্ত্রীর নামও সঠিক বলেননি।

এ ঘটনার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে মামুনুল হক বলেন, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে, স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে কোনো সত্যকে গোপন করার অবকাশ রয়েছে শরিয়াহে।

মামুনুল হক আরও বলেন, ‘আমি একাধিক বিয়ে করেছি। ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। একজন পুরুষকে চারটি বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে ইসলামি শরিয়াহ। সুতরাং একাধিক বিয়ে করা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নিয়ে কারও কথা বলার অধিকার নেই। দুই বছর আগে শরিয়াহ মোতাবেক আমি জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেছি।’

এদিকে রিসোর্টে সঙ্গে থাকা নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসা মাওলানা মামুনুল হক এবার করেছেন তৃতীয় বিয়ের দাবি! এক বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা এক নারীকে তিনি বিয়ে করেন বলে ওই নারীর ভাইকে জানান মামুনুল।

বিষয়টি নিয়ে ওই নারীর ভাই শাজাহান সাজু সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন,  শনিবার (১০ এপ্রিল) মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে মামুনুল হক আমার বোনকে বিয়ে করার কথা জানান। এ সংক্রান্ত একটি স্ট্যাম্প দেখিয়েছেন তিনি। তবে এটি কাবিননামা নয়।

বিষয়টি নিয়ে মামুনুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলেননি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মামুনুল হক যে নারীকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে মাস্টার্স করেছেন। ২০১৩ সালে যখন তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন, তখন তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। আড়াই বছর আগে ওই নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর ওই নারীকে একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি দেন মামুনুল হক। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

বিচ্ছেদের পর ওই নারীকে কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় রাখেন মামুনুল হক। সম্প্রতি রিসোর্টকাণ্ডের পর ওই নারীকে মামুনুল হক তার বড় বোনের বাসায় রেখেছেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.