৪৮৩টি জর্দা ও গুল কারখানার মধ্যে কর দেয় মাত্র ২১৮টি

বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের করজালের বাইরে রয়েছে। সম্প্রতি ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের কর জালের বাইরে থাকার কারণ এবং এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে জানতে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

 “Factors Inhibiting Smokeless Tobacco Tax Payments by Smokeless Tobacco Manufacturers Operating Outside the Tax Net in Bangladesh” শীর্ষক উক্ত গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে আজ সোমবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাথে একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞা। গবেষক দলের প্রধান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনা পর্বে অংশ নেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর রিসার্চ ডিরেক্টর মারিয়া জি. কারমোনা এবং সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস ডিরেক্টর বন্দনা শাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, “শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমে যাবে।” গবেষণার সার্বিক ফলাফলে দেখা গেছে, দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ২১৮টি জর্দা ও গুল কারখানা কর প্রদান করে। ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে থাকা ৮৮ জন ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীর (৮১ জর্দা এবং ৭ গুল) মধ্যে ৩৩ শতাংশের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই। ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করেন। সাধারণত বাড়িতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে কারখানায় এসব তামাকপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় মোট মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা।

গবেষণায় অনানুষ্ঠানিক (informal) উপায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকেই  ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও এনবিআর এর দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি অভাবে এখাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।

গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসাথে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা হ্রাস করার সুপারিশও করা হয়েছে। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতি প্রচলন, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এনবিআর জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি হিসেবে এসব পণ্যে ব্যান্ডরোল ব্যবহার, অনিবন্ধিত কারখানাগুলোকে করজালের আওতায় নিয়ে আসতে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে ক্ষমতা প্রদান এবং তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের পুরস্কার প্রদান না করা।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠির মধ্যে ২০.৬ শতাংশ  মানুষ (২ কোটি ২০ লক্ষ) এবং ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সি বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৪.৫ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩০.৬ কোটি টাকা যা মোট তামাক রাজস্বের মাত্র ০.১২ শতাংশ। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং মুখ গহ্বরসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ি। বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন চলে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত এবং আইন বহির্ভূত উপায়ে। ফলে এটি অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য রয়ে গেছে। সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের করজালের মধ্যে আনা হলে এখাতে রাজস্ব আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.