ইউরোপ-আমেরিকায় চাপের মুখে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

একে করোনার টিকার আকাল, তার উপর একটি টিকা কোম্পানির ভাবমূর্তি ও আচরণ নিয়ে সংশয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে৷ একাধিক কারণে রোষের মুখে পড়ছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা৷ টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে বার বার অনিশ্চয়তার পর আপাতত আবার ছাড়পত্র পেলেও অনেক মানুষ এই কোম্পানির টিকা নিতে চাইছেন না৷ তার উপর ইইউ-র সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যথেষ্ট পরিমাণ করোনা টিকা সরবরাহ করতে একাধিকবার ব্যর্থ হচ্ছে এই কোম্পানি৷ এছাড়া আমেরিকায় সেই কোম্পানির ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে৷

এমন প্রেক্ষাপটে ইইউ দেশগুলোতে উৎপাদিত টিকা বাইরে রপ্তানির উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ চালু করছে ব্রাসেলস৷ বিশেষ করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির সরবরাহের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে ইইউ৷ ইউরোপীয় কমিশন রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও অনুমোদন প্রক্রিয়া সংশোধন করতে চলেছে৷ এর আওতায় সরাসরি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো না হলেও যে দেশে টিকা রপ্তানি করা হচ্ছে, সেই দেশ থেকে সরবরাহের উপর বাধানিষেধ বিবেচনা করা হবে৷ অর্থাৎ সরবরাহ একতরফা হলে চলবে না৷
উল্লেখ্য, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন৷ শুক্রবার ইইউ শীর্ষ বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷

অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির প্রতি এমন কড়া মনোভাবের পেছনে ব্রিটেনের এক বড় ভূমিকা রয়েছে৷ ইইউ কমিশনের স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সান্ড্রা গালিনা ইইউ পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা গত মাস পর্যন্ত ব্রিটেনে সরবরাহে কোনো ঘাটতি রাখেনি৷ শুধু ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ইইউ থেকে প্রায় এক কোটি টিকা সে দেশে পাঠানো হয়েছে৷ অথচ বোঝাপড়া অনুযায়ী ইইউ যথেষ্ট টিকা পাচ্ছে না৷ ব্রিটেনে উৎপাদিত একটি টিকাও ইইউ-তে আসেনি৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির কাছে দশ কোটিরও বেশি টিকা অর্ডার দিলেও তার এক চতুর্থাংশ হাতে পায়নি ইইউ৷ ফলে সেই কোম্পানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চলেছে৷

এমন অভিযোগের মুখে ব্রিটেন কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে৷ ভারতের এক কারখানা থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সরবরাহে বিলম্বের ফলে টিকার সরবরাহ কমে গেছে৷ তার উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কড়া মনোভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে৷ নেদারল্যান্ডসে সেই কোম্পানির এক কারখানায় উৎপাদন শুরু হলেই ব্রিটেন সেখান থেকে টিকা পেতে আগ্রহী৷ ইইউ-র অভিযোগের মুখে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখালেও এখন আলোচনার মাধ্যমে সংকট মেটানোর আশা প্রকাশ করছেন৷

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা৷ টিকা তৈরির প্রস্তুতির সময়ে পরীক্ষার ক্ষেত্রে সেই কোম্পানি নিরপেক্ষভাবে সব তথ্য বিবেচনা না করে শুধু সুবিধাজনক তথ্য বেছে নিয়ে টিকার কার্যকারিতা তুলে ধরেছিল বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় অ্যালার্জি ও ছোঁয়াচে রোগ প্রতিষ্ঠান৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকা অবশ্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন তথ্য প্রকাশ করার অঙ্গীকার করে অভিযোগ খণ্ডন করার অঙ্গীকার করেছে৷ এদিকে টিকা নেবার পর ফ্রান্সে এক মেডিকাল ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ফলে নানা কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকা চাপের মুখে পড়ছে৷ সূত্র: এএফপি, এপি

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.