বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের দাপুটে জয়

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে জয়ের লক্ষ্যে এবার খেলতে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। সিরিজটি শুরুর আগে ভিন্ন ভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ থাকার কথা বলেছেন টাইগারদের কোচ, অধিনায়করা। কিন্তু মাঠের খেলায় দেখা গেল ঠিক বিপরীত চিত্র। স্বাগতিকদের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ।

ব্যাটসম্যানদের ভয়াবহ ব্যর্থতার মিছিলে আগে ব্যাট করে মাত্র ১৩১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ২১.২ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টানা ১৪ ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। এছাড়া ওয়ানডে সুপার লিগেও এটি টাইগারদের প্রথম পরাজয়।

বাংলাদেশের দেয়া ১৩২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ডানহাতি ওপেনার মার্টিন গাপটিল। মোস্তাফিজুর রহমানের করা প্রথম ওভারেই তিনি চার-ছয়ের মারে তুলে নেন দশ রান। দলীয় পঞ্চাশ রান পূরণ করতে নেন মাত্র ৫ ওভার। তবে তাকে বেশিদূর যেতে দেননি তাসকিন আহমেদ।

ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের প্রথমবারের মতো তাসকিনকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সেই ওভারের তৃতীয় বলে বড় শট হাঁকানোর চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন গাপটিল। আউট হওয়ার আগে ৩টি চার ও ৪টি বিশাল ছয়ের মারে মাত্র ১৯ বলে করেন ৩৮ রান।

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসেন অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ে। আরেক ওপেনার হেনরি নিকলসের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ৬৫ রান। দলের জয়ের জন্য মাত্র ১৩ রান বাকি থাকতে হাসান মাহমুদের বলে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচে পরিণত হন ৫২ বলে ২৭ রান করা কনওয়ে।

অপর প্রান্তে দুই উইকেট পড়ে গেলেও নিজের প্রান্তে অবিচল ছিলেন নিকলস। ফিফটি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। ইনিংসের ২২তম ওভারের জোড়া চার মেরে ম্যাচ শেষ করেন আরেক অভিষিক্ত উইল ইয়ং। নিকলস অপরাজিত থাকেন ৫৩ বলে ৪৯ রান করে। ইয়ং করেন ৬ বলে ১১ রান।

এর আগে ট্রেন্ট বোল্ট, জিমি নিশাম ও মিচেল স্যান্টনারদের বোলিং তোপে পড়ে বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ছোট ছোট শুরু পেয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যাটসম্যান। কিন্তু কেউই তা কাজে লাগাতে পারেননি। সবাই সাজঘরে ফিরে গেছেন ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়েই। যে কারণে ছয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কে পৌঁছলেও, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি মাত্র ২৭ রানের।

ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ২০০৭ সালে কুইন্সটাউনে করা ৯৩ রান এখনও রয়েছে সর্বনিম্ন হিসেবে। আর ডানেডিনের মাঠে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন সংগ্রহই এটি। এর আগে ২০১০ সালে এই মাঠে করা ১৮৩ ছিল এতদিন ধরে টাইগারদের সর্বনিম্ন।

কথায় আছে, ‘সকালের সুর্য সবসময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয় না’। তার জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকলো বাংলাদেশের ইনিংস।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ট্রেন্ট বোল্টের করা ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের ও নিজের রানের খাতা খুলেছিলেন ‘বার্থ-ডে বয়’ তামিম। কিন্তু এরপর আচম্বিতে মেঘে ঢেকে গেলো গণগণে সুর্যটা।

টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দলীয় শতরান পাওয়ার আগেই ৭ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়ে টাইগাররা। বিপর্যয়ের সময় মাহমুউদউল্লাহ রিয়াদ যা একটু ভরসা হয়ে ওঠেছিলেন। ৫৪ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২৭ রান করেন তিনি।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ দলীয় ১২৫ রানে সাজঘরে ফেরার পর স্কোরবোর্ডে আর ৬ রান জমা পড়তেই শেষ ২ উইকেট তাসকিন (১০) ও হাসান মাহমু্দকে (১) হারায় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ অপরাজিত ছিলেন ব্যক্তিগত ১ রানে ।

এর আগে কিউই বোলারদের সামনে অসহায় টাইগাররা ছিল আসা-যাওয়ার মাঝে। বোল্টের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন তামিম। টাইগার ওপেনার ১৫ বলে করেছেন ১৩ রান। তামিমের বিদায়ের পরপরই একই ওভারের চতুর্থ বলে কনওয়ের হাতে বন্দী হয়ে বিদায় নেন সৌম্য সরকার (০)।

জীবন পেয়েও ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি আরেক ওপেনার লিটন দাশ। তৃতীয় উইকেট হিসেবে বিদায় নেন তিনি। তার ৩৬ বলে ১৯ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১ চারে।

বিপদের সময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি কেউ। তবে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন মুশফিকুর রহিম (২৩)। কিন্তু ৪৯ বল মোকাবেলা করেও তিনি ব্যর্থ হোন ব্যাট হাতে। এরপর রান আউটের শিকার হোন মোহাম্মদ মিঠুন (৯)।  তার বিদায়ের পর জোড়া আঘাত হেনে মেহেদী হাসান মিরাজ (১) ও ওয়ানডেতে অভিষেক হওয়া মেহদেী হাসানকে (১৪) সাজঘরে ফেরান মিচেল স্যান্টনার।

কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন বোল্ট। দু’টি করে উইকেট ভাগাভাগি করেছেন জিমি নিশাম ও স্যান্টনার।

এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো নিউজিল্যান্ড। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বোল্ট।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.