ঋণ বিতরণে নিয়ম মানছে না ১৭ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম না মেনেই ঋণ বিতরণ করছে দেশের ১৭টি ব্যাংক। অভিভাবক ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণ বিতরণে আমানত ও ঋণের সুদহারের পার্থক্য (স্প্রেড) ৪ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ব্যাংকগুলো সহনীয় মাত্রায় স্প্রেড সীমা না রেখেই ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করায় আমানতকারীদের অল্প সুদে ব্যাংকে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এতে তারা ব্যাংকে বিনিয়োগ করা থেকে উৎসাহ হারাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ প্রতিবেদনে ৫৯টি ব্যাংকের আমানত-ঋণ সুদহারের পার্থক্যের (স্প্রেড) তথ্য দিয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিয়ম ভঙ্গ করে দেশি-বিদেশি ১৭টি ব্যাংক ৪ শতাংশের বেশি স্প্রেডে ঋণ দিচ্ছে গ্রাহকদের। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি ১০টি ব্যাংক ও বিদেশি ৭টি ব্যাংক।

ইচ্ছামতো ঋণের সুদ আরোপ বন্ধ করতে স্প্রেড নীতিমালা জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্যাংক যদি গ্রাহকের থেকে ৫ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করে তাহলে সে ব্যাংককে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদ যোগ করে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে। তবে এই নিয়ম উপেক্ষা করে বেসরকারি খাতের ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ছয় দশমিক ৩৮ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ করছে। এছাড়া ব্রাক ব্যাংক লিমিটেড ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দ্যা সিটি ব্যাংক লিমিটেড ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এছাড়া বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ আমানত-ঋণ সুদহারের পার্থক্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএ ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, উরি ব্যাংক ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ, এইচএসবিসি ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ব্যাংক আল-ফালাহ্ লিমিটেড ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এ ব্যাপারে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী অর্থসূচককে বলেন, স্প্রেড সীমা ৪ শতাংশের একটু বেশি হলেও আমাদের বিতরণ করা ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশের নিচেই আছে। আমরা ডিপোজিটের জন্য সুদ একটু কমিয়ে রেখেছি, তাই স্প্রেড একটু বেড়ে গেছে। সামনে হয়তো এটা আর থাকবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম না মেনে বেশি স্প্রেডে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাক ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন কোন মন্তব্য করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা অর্থসূচককে বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সহনীয় মাত্রায় বা ৪ শতাংশ স্প্রেডে ঋণ বিতরণ না করলে আমানতকারীদের সুদের হার কমে যায়। এতে তারা ব্যাংকে বিনিয়োগ না করে সঞ্চয়পত্রে কিংবা অন্যখাতে বিনিয়োগ করে। ফলে ব্যাংকের ডিপোজিট কমে যাবে। তখন বড় বড় ডেভেলপমেন্ট খাতে ব্যাংক বিনিয়োগ করতে পারবে না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অর্থসূচককে বলেন, কোন ব্যাংক যদি চার শতাংশের বেশি স্প্রেড রেখে ৯ শতাংশ সুদের নিচে ঋণ দেয় তাহলে সেটাকে আমরা সমস্যা মনে করি না। তবে ব্যাংক যদি ৯ শতাংশের বেশি সুদে গ্রাহকদের ঋণ দেয় সেক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.