চট্টগ্রামে এসআইয়ের কোটিপতি স্ত্রী কারাগারে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সিআইডির উপ-পরিদর্শক নওয়াব আলীর কোটিপতি স্ত্রী গোলজার বেগমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলজার বেগম চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি আদালতে জামিনের আবেদন করেন। এই আবেদন নাকচ করে গোলজার বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গোলজার বেগম চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার স্বামী নওয়াব বর্তমানে ঢাকায় সিআইডির এসআই পদে কর্মরত আছেন।

একই মামলায় সিআইডির উপ-পরিদর্শক নওয়াব আলী, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষ পলাতক রয়েছেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন ও মানি লন্ডারিং মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন গোলজার বেগম। দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মাহমুদুল হক জানান, ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে স্ত্রীর নামে আয় দেখান এসআই নওয়াব আলী। দুদক তদন্তে নেমে তার বিরুদ্ধে অবৈধ উপার্জনের সত্যতা পান। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর দুদকে মামলা দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর নওয়াব আলী, তার স্ত্রী গোলজার বেগম, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি চারজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেন নওয়াব আলী। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকার মালিক সাজিয়েছেন স্ত্রী গোলজার বেগমকে। মাছ চাষ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন বলে কাগজপত্রে দেখালেও বাস্তবে মাছ চাষের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারপরও মাছ চাষ করা হয় মর্মে কর কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এসআই নওয়াব আলী, তার স্ত্রী গোলজার বেগম, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে আসামি করে আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দিয়েছে।

এসআই নওয়াব আলী গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, তাকে হয়রানি করতে দুদক মিথ্যা মামলা করেছে। স্ত্রীর মাছ চাষের আয়ে তার সব অর্জন।

দুদক তদন্তে পেয়েছে, নওয়াব আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের কেকানিয়া এলাকায়। সেখানে ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন নিজের নামে। স্ত্রী গোলজারের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুরে ৩৫৪ শতক জমি, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায় পার্কিংসহ ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই এলাকায় ৪ শতক জমি রয়েছে। গোলজারের নামে একটি মাইক্রোবাসও রয়েছে।

দুদকে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে গোলজার দাবি করেছেন, তিনি মিরসরাইয়ের পশ্চিম ইছাখালীর মদ্দারহাটে হারেস আহমদ, আমিনুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, শওকত আকবরসহ সাতজনের সঙ্গে চুক্তি করে একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু তদন্তে উঠে আসে, হারেস আহমদসহ যেসব ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি দেখানো হয়েছে, তারা ২০ বছর আগে মারা গেছেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.