‘এলডিসি থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণে সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে’

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উত্তরণের জন্য সরকারকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনতে হবে। প্রস্তুতিকালীন সময়ের উন্নয়ন সবার জন্য ও পরিবেশবান্ধব না হলে তা টেকসই হবে না।

বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এই মতামত দেন। ‘এলডিসি গ্রুপ থেকে বের হওয়া: অর্থনীতির গতি ধরে রাখার কৌশল’ শিরোনামের সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি তাদের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। ফলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হবে। এতে এলডিসি হিসেবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেয়ে আসছে, তা থাকবে না। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কী করণীয়, তা নিয়েই বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বক্তারা।

শাহরিয়ার আলম বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দুটোই রয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার পণ্যের বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উচ্চ প্রযুক্তি ও উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দক্ষ ঋণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ করছে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে আগামীতে সুদিন আসছে।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। বিশেষত তৈরি পোশাক এবং ওষুধ শিল্পকে চীন, ভারত, ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তিনি ওষুধ শিল্প নগরী (এপিআই পার্ক) স্থাপনের ধীরগতির কারণে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ১২ বছরেও পার্কটির স্থাপন শেষ হয়নি। বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উত্তরণের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, দক্ষতা উন্নয়নই এখন প্রধান কাজ। তবে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর যথেষ্ট নয়। যথাযথভাবে প্রস্তুতির জন্য উদ্যোক্তাদের পাশে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষিত তুলে ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এলডিসি সুবিধা আরও বাড়ানোর আবেদন করতে হবে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার ফলে বৈশ্বিক বাজারের বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার কমবে। এতে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। তবে এ জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। অনেক সভরেন ফান্ড বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক ধরনের স্বস্তি নিয়ে এলডিসি গ্রুপ থেকে বের হবে। এটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিফলন এবং উন্নয়নের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তবে উত্তরণ টেকসই করতে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন দরকার। যাতে পেছনে তাকাতে না হয়। তিনি বলেন, এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর প্রথম অভিঘাত আসবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে। বর্তমানে যেসব বাজারে শুল্ক্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশ সুবিধা রয়েছে, তা থাকবে না। এ ছাড়া কম সুদ ও সহজ শর্তের ঋণ থাকবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে ওষুধ খাতে পেটেন্ট অধিকার রক্ষা করতে হয় না। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর তা করতে হবে। এতে খরচ বেড়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বিটিএমএর সাবেক সভাপতি ও মালেক স্পিনিং মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মতিন চৌধুরী বস্ত্র খাতে এফডিআই উন্মুক্ত করার প্রস্তাব করেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ঢাকা অফিসের প্রধান টোমো পেশিয়ামেন, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.