ভুয়া এনআইডি তৈরি করে ব্যাংক লোন নিতো তারা

এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে ফ্ল্যাট মালিক বা ক্রেতা সেজে ঢাকা ব্যাংকসহ ১১ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর এনআইডি পরিবর্তন করে তাদের এই জালিয়াতির কাজে সহায়তা করতো নির্বাচন কমিশনেরই নিম্ন শ্রেণির কয়েকজন কর্মকর্তা। জালিয়াতিতে জড়িত ৪৪ জনকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।

আত্মসাৎকারী ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- আল আমিন ওরফে জামিল শরীফ (৩৪), খ ম হাসান ইমাম ওরফে বিদ্যুত (৪৭), আব্দুল্লাহ আল শহীদ (৪১), রেজাউল ইসলাম (৩৮) ও শাহ জামান (৩৯)। মঙ্গলবার (০২ মার্চ) রাজধানীর খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার (০৩ মার্চ) সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ভুয়া এনআইডি, ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ঢাকা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর খিলগাঁও থানায় এবং গত ১৩ ডিসেম্বর পল্টন থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়। ওই মামলা দুটির তদন্তে নেমে ঘটনার মূলহোতা বিপ্লবকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে ডিবি।

জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব জানান, ভুয়া এনআইডি তৈরির সাথে জড়িত নির্বাচন কমিশন অফিসের নিচের শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী। ১ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন তিনি। বিপ্লবের দেওয়া তথ্যে ডিবি পুলিশ আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। আল আমিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার সাথে জড়িত অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়।

তার দেওয়া তথ্য মতে, বিদ্যুতকে গ্রেফতার করা হয়। বিদ্যুত এবং আল আমিন তাদের অন্যান্য সহযোগীদের প্রয়োজন অনুয়ায়ী কখনও ক্রেতা, আবার কখনও বিক্রেতা, কখনও জমির মালিক, কখনও ফ্ল্যাটের মালিক সাজাতেন। আব্দুল্লাহ আল শহীদ ভুয়া এনআইডি তৈরির মধ্যস্ততাকারী হিসেবে কাজ করতেন। আর রেজাউল ইসলাম ও শাহ জাহান ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে দিতেন।

যেভাবে প্রতারণা করে তারা
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রতারক চক্রের সদস্যরা কোনও একটি ব্যাংকের শাখাকে টার্গেট করে সেখানে লোন নেওয়ার জন্য যায়। ফ্যাটের বিপরীতে লোন নেওয়ার কথা বললে ব্যাংক কর্মকর্তারা সেই ফ্ল্যাট ভিজিট করতে চায়। প্রতারকরা আগে থেকেই কোনও একটি ফ্ল্যাট বিক্রির সাইনবোর্ড ঠিক করে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সেখানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রতারক দলের সদস্যরা সেই বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে আসে। সেই এনআইডির ছবি পরিবর্তন করে ভুয়া এনআইডি তৈরি করে ব্যাংকে জমা দেয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেই এনআইডি সার্ভারে যাচাই করে ঠিক দেখতে পেয়ে লোন অনুমোদন করে দেয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা ব্যাংকে কাগজপত্র ও এনআইডি জমা দেওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারীর মাধ্যমে সেই ভুয়া এনআইডির তথ্য সার্ভারে আপলোড করে। যাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে গিয়ে এর সত্যতা পায়। যাচাই শেষ হলেই তা আবার নামিয়ে ফেলা হয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ইতোমধ্যে এগারটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এভাবে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। আমরা এসব বিষয়ে তদন্ত করছি। এছাড়া ভুয়া এনআইডির তৈরির অসাধু কর্মচারীদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.