শাকিবকে ‘দাঁড়কাক’ বললেন ঝন্টু

সময়টা ভালো যাচ্ছে না বাংলা সিনেমার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বহুদিন ধরে সিনেমার মন্দাদশা কাটছে না। লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় দিন দিন কমছে সিনেমার প্রযোজক বা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। যারা আগে নিয়মিত সিনেমা নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাও লোকসান গুনতে গুনতে ইন্ডাস্ট্রি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

চলচ্চিত্র শিল্পের মন্দাদশা কাটাতে সিনেমার ক্রান্তিলগ্নে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া ১০০ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। নীরব এফডিসি ফের চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। শাপলার এমন সাফল্যকে সেরা নায়ক শাকিব খান বকা দিলেন ‘স্টুপিড’ বলে।  শাকিব ১০০ সিনেমাকে ইঙ্গিত করে জানালেন, ১০০টা বাজে সিনেমার দরকার নেই। ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে একটি ভালো সিনেমাই যথেষ্ট। নতুন ছবির চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসে নিজ বক্তব্যে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন শাকিব খান।

তার ভাষায়, যেখানে পাশের দেশের ছোট্ট মালায়লাম ইন্ডাস্ট্রি এখন ৩শ কোটি রুপি দিয়ে সিনেমা বানাচ্ছে, সেখানে আমরা নাকি ১০/২০ লাখে নেমে এসেছি! হোয়াট আ ফিল্ম! যারা সিনেমাকে এ অবস্থায় নামিয়েছে তারা বলছেন, ‘না খেয়ে মরছে ইন্ডাস্ট্রির মানুষ। ওদের আমি কাজ দিচ্ছি।’আমার কথা স্পষ্ট, তোমার কাজ দেওয়ার দরকার নাই। স্টুপিড! তুমি কে কাজ দেওয়ার? এরপরই বলেন, আমার ১০০/৫০০ ছবির দরকার নেই। একটা ভালো ছবিই ঘুরিয়ে দিতে পারে ইন্ডাস্ট্রির চাকা।

তবে শাকিবের এমন বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সিনেপাড়ার অনেকেই। ক্ষোপ প্রকাশ করে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, কাহিনিকার ও গীতিকার দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি লিখেছেন, সেলিম খান এবার হলো সবার প্রাণ/তাইনা দেখে একটি হিরোর গেলো জান/নামটি হলো শাকিব খান। সেলিম খান একশতটা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করবে এ সংবাদে কে কতটুকু খুশি হয়েছে আমি জানি না, তবে আমি ততটুকু খুশি হয়েছি যতটুকু খুশি ছোটবেলা ঈদের চাঁদ দেখলে হতাম। আমি কিন্তু ঐ একশত চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে নেই। তবুও এত খুশি হয়েছি এ জন্য আমাদের চলচ্চিত্র অঙ্গন আবার নতুন করে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পাবে। বলতে গেলে আমাদের চলচ্চিত্র এক রকম প্রযোজক শূন্য হয়ে পড়েছিলো। এবার সেই শূন্যতা আবার পূর্ণ হতে চলেছে, আজ এই আনন্দে শুধু আমি আনন্দিত নই, আনন্দিত গোটা চলচ্চিত্র।

ঝন্টু আরও লিখেন, তবে এরই মধ্যে চলচ্চিত্রের একজনকে খুশি হতে দেখলাম না, অনলাইন সোশ্যাল মাধ্যমগুলোতে দেখলাম সেখানে শাকিব খানের কথা শুনে আমার মনে হলো এতে তার হিংসা হয়েছে। যদিও সে কারো নাম ধরে কথা বলেনি তবুও আমার মনে হলো সেলিম খানের একশতটি চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়েই কথা বলেছেন। কাকে যেন স্টুপিডও বলেছে। কিন্তু ওর তো এমন হিংসা করার কথা নয় কারন সে আমাদের কোন প্রযোজক নয়, সে শুধু মাত্র একজন নায়ক। আজকাল সে টুকটাক ইংরেজী শব্দও ব্যবহার করছে, কোকিলের মত অনেকেই সুর ধরতে চায় কিন্তু কোকিলের ডাক তো অন্য পাখি ডাকতে পারে না এবং দাঁড়কাক কখনো ময়ূর সাজতে পারে না।

তিনি লিখেন, শাকিব খান বর্তমানে এক নাম্বার নায়ক হলেও সে ভেবে দেখেনি ওর জন্য বর্তমানে চলচ্চিত্র প্রায় ধ্বংসের পথে। এর কারন হলো চলচ্চিত্রে ব্যবসা না থাকা সত্বেও ৩০/৪০ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেয় শুনেছি, সে যদি চলচ্চিত্রকে ভালোবাসতো তাহলে ঐ পারিশ্রমিকের ৪ ভাগের ১ ভাগ টাকা পারিশ্রমিক নিয়ে অভিনয় করতো। ২ নাম্বার কারন হলো ৩০ দিনে একটি চলচ্চিত্র যদি শেষ করা যায় সেখানে তার নন কো-অপারেশনের জন্য দুই মাসের অধিক সময় লেগে যায়। উল্লেখ থাকে যে, বর্তমানে একদিন শুটিং করতে প্রযোজকের ব্যয় হয় ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। এখন ৩০ দিনের পরিবর্তে যদি শাকিব খানের জন্য ৬০ দিন সময় ব্যয় হয় তাহলে ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হয়। শাকিবের এমন আচরনে মনে হয় প্রযোজকের টাকা তার পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়া আর কিছুই না। আমি টাকা খরচ করাবো তাতে কার কি আসে যায়? বাহ্। আমার শেষ কথা হলো সবার উচিত সেলিম খানকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা।

অর্থসূচক/এএ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.