হানিফ সংকেতকে যে ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান

অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জামালেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ০৬ মিনিটে সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন)।

গুনী এই অভিনেতাকে নিয়ে তার সহকর্মীদের স্মৃতির শেষ নেই। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে সিনেমার পাশাপাশি নাটিক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেও কাজ করেছেন। যার মাঝে নিয়োমিত দেখা যেতো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে।

দর্শকপ্রিয় এই অভিনেতা কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে ইত্যাদির সঞ্জালক ও নির্মাতা হানিফ সংকেত বলেন,

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে ঝরে গেলো আরো একটি নক্ষত্র। সকলের প্রিয় অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। আমাদের এটিএম ভাই। বর্ণাঢ্য যার অভিনয় জীবন। বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। অবশেষে আজ সকালে সূত্রাপুরে তার নিজস্ব বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অত্যন্ত মেধাবী, প্রাণবন্ত, বিনয়ী, সহজ-সরল, সাদামাটা মানুষ ছিলেন এটিএম ভাই। ছিলেন একজন আদর্শ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। অসুস্থতার সময় নিয়মিত তার খোঁজ-খবর রাখতে চেষ্টা করতাম। হাসপাতালেও গিয়েছি। রুনী ভাবীর সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো।

এটিএম ভাই ছিলেন ইত্যাদির বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর প্রায় নিয়মিত শিল্পী। এছাড়াও আমার অন্যান্য অনুষ্ঠান ও অনেকগুলো নাটকে তাকে নেয়ার সুযোগ হয়েছিলো। তাই কাছ থেকে দেখেছি, গভীরভাবে মেশার সুযোগ পেয়েছি। ছিলো আন্তরিক সম্পর্ক। ইত্যাদির প্রতি তার একটা বিশেষ দুর্বলতাও ছিলো। আর সেজন্যই চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও তিনি বার বার ইত্যাদির কথা স্মরণ করেছেন। হাসপাতালে দেখতে গেলে সুস্থ হয়ে আবারও ইত্যাদির ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। আর তাই প্রথম যখন কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন তখনই ভাবী আমাকে জানিয়েছিলেন এটিএম ভাই ইত্যাদিতে অভিনয় করতে চান। যেহেতু আমরা আমাদের নিজস্ব শ্যুটিং স্পটে শ্যুটিং করি এবং এখানকার পরিবেশ, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাই তার বিশ্বাস এখানে এসে অভিনয় করলে তার শারীরিক কোন অসুবিধা হবে না। তাই এখান থেকেই তিনি আবার যাত্রা শুরু করতে চান। আরেকজন বর্ষীয়ান অভিনেতা জনাব মাসুদ আলী খানের সঙ্গে জুটি করে সেসময় ইত্যাদির জন্য ছোট্ট একটি নাট্যাংশ নির্মাণ করেছিলাম। যেটি পরবর্তীতে ইত্যাদিতে প্রচারিত হয়। আর ইত্যাদিতে করা সেই অভিনয়টুকুই ছিলো এটিএম ভাইয়ের জীবনের শেষ অভিনয়। অনেক শিল্পীরই বিকল্প তৈরি হয় কিংবা করা যায় কিন্তু এটিএম শামসুজ্জামানের কখনোই কোন বিকল্প ছিলো না, আর তৈরি হবে কিনা জানি না। তার প্রতিটি চরিত্রই ছিলো তার অভিনয় নৈপুণ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এই মহান শিল্পীর মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা তার মাগফিরাত কামনা করছি।

অর্থসূচক/এএ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.