বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর টাকার প্রয়োজন হয় না: বিএসইসি চেয়ারম্যান

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর টাকার প্রয়োজন হয় না বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।

আজ (২ ফেব্রুয়ারি) বিএসইসির হল রুমে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশিদের দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করার লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে ‘রোড শো’ উপ‌লক্ষে আয়ো‌জিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্ত‌ব্যে তি‌নি এ কথা বলেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাদের রুলস রেগুলেশনের মানতে দুই থেকে তিন শতাংশ আরও খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে তারা তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাছাড়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর টাকার প্রয়োজন হয় না। তাদের অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। যে কারণে তাদের কিছু ইনসেনটিভ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের ইনসেনটিভ দেওয়ার একমাত্র উপায় কর ছাড়। কর্পোরেট কর হারের ব্যবধান ১৫ শতাংশ করা হলে তারা তালিকাভুক্ত হওয়ায় ক্ষেত্রে আগ্রহী হবে।

তিনি আরও বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হলে করপোরেট করের ব্যবধান বাড়াতে হবে। আগে তালিকা বহির্ভূত করের ব্যবধান ১০ শতাংশ থাকলেও চলতি বাজেটে সেটি কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এজন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে এ দুই ক্যাটাগ‌রির করপোরেট করের ব্যবধান বাড়াতে হবে।

এ সময় দুবাইতে আয়োজিত রোড শো নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, উক্ত বিষয়টিকে রোড শো বলা হলেও বিষয়টি সচরাচর ঘটে যাওয়া রোড শো এর মতো নয়। বিএসইসি রোড শো অন দুবাই অনুষ্ঠানটিতে বিদেশী এবং বাংলাদেশি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলার জন্য কিছু বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে থাকছে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন এবং বিশেষ কিছু আকর্ষণ, নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি, সুকুক বা ইসলামিক বন্ডে আগ্রহী, এঞ্জেল ইনভেষ্টর, ভেনচার ক্যাপিটালিস্টসহ ভিবিন্ন সেক্টর থেকে আগত অতিথিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন। এছাড়া লন্ডন, রোম, টরন্ট, হংকং, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, টোকিও, মালয়শিয়াসহ বিভিন্ন উন্নত শহরে ভবিষ্যতে এই আয়োজনের পরিকল্পনা ছিলো, তবে করোনা মহামারির কারণে তা হয়ে উঠছে না। তবে দুবাইয়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক বলে দুবাই দিয়েই এই আয়োজনের সূচনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এ সময় বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক মাহবুব আলম, নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চারদিন ব্যাপি এই রোড শো আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে প্রবাসি বিনিয়োগকারী, বিদেশী বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিনিয়োগকারীদের ছোট দলের সঙ্গে সম্মেলন করবে কমিশন। এতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা, বিনিয়োগের সুযোগ, সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হবে।

জানা গেছে, বিদেশে অবস্থান করা অনেক সম্পদশালী বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের প্রচুর অলস অর্থ রয়েছে। কিন্তু তারা বিনিয়োগ করার মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের সঞ্চিত অর্থ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়নে কাজে লাগাতে চায় সরকার। বিদেশে অবস্থানরত বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে ডিজিটাল বুথ চালু করার উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসইসি। এতে প্রবাসী বিনিয়োগকারী সরাসরি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন এবং নিজের বিনিয়োগ নিজেই পরিচালনা করতে পারবেন।

চারিদনে পাঁচটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারগুলোতে বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। তার মধ্যে-

৯ ফেব্রুয়ারি সকালে প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে ইনভেস্টর সামিট: বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট অনুষ্ঠিত হবে। একই বিষয়ে দুপুরে আরকটি সেমিনার হবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে।

১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সুকুক: দ্যা নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এতে অংশ গ্রহণ করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

১১ ফেব্রুয়ারি সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যান্ড ভেনচার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ গ্রহণ করবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্টিত হবে বাইলেটারেল অ্যান্ড মাল্টিলেটারেল মিটিং। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ অংশ গ্রহণ করবে।

অর্থসূচক/এমআর/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.