কাদের মির্জাকে ধৈর্য ধরতে বললেন ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য আলোচিত বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে ওবায়দুল কাদেরের ভাই পৌর মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে নেওয়া সব কর্মসূচি স্থগিত করছি। ২ ফেব্রুয়ারি ডাকা সংবাদ সম্মেলনও স্থগিত করছি।’

তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর অপরাজনীতির বিষয়ে নেত্রীর কাছে অভিযোগ আছে। এসব বন্ধে তিনি পদক্ষেপ নেবেন আস্থা রাখি। বন্ধ না হলে একমাস পর প্রেসক্লাবে দাঁড়াবো।’

সৌজন্য সাক্ষাতে আবদুল কাদের মির্জার পরিবারের সদস্য, বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচিত কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলরসহ প্রায় দুই শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাতের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত বলেন, ‘নেতার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছি। জেলার রাজনীতি নিয়ে আমরা এতদিন ধরে যে সব অভিযোগ করেছি, সেই বিষয়ে তিনি (ওবায়দুল কাদের) আমাদের বলেছেন, নেত্রী সব কিছু জানেন। তিনি যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। তিনি বলেছেন আমাদের বসুরহাট ও কবিরহাট এলাকায় গ্যাস যাবে। এই বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন বলে জানিয়েছেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরনবী চৌধুরী বলেছেন, ‘উনি আমাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। বলেছেন রাজনীতি করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে।’

জানা গেছে, বৈঠকে ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন যে সব অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে কথা হয়েছে সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন এবং বোঝেন। উনার ঊর্ধ্বে কেউ নন। তিনি যে কোনও সময়, যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আপনারা যারা তৃণমূলে রাজনীতি করেন, তারা নেত্রীর প্রতি শতভাগ আস্থা ও ভালোবাসা রেখে কাজ করেন। কোনও গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।’

তিনি বলেন, ‘কোনও জনপ্রতিনিধি বা অন্য কেউ যদি কিছু বলে সেটার বিষয়ে আমি কাউকে প্রতিবাদ করতে বলি নাই। আপনারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন, সেই বিষয়ে আমি নিষেধ করেছি। নোয়াখালী শহরে প্রতিবাদ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। আজকের পর থেকে আপনারা কোনও অবাস্তব কথা বলবেন না। গঠনমূলক কথা বলবেন। কারও বিরুদ্ধে, কারও সমালোচনা করবেন না। যদি কেউ করেন, সেই সব বিষয়ে নেত্রী ওয়াকিবহাল। তিনিই ব্যবস্থা নেবেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলেন, তাহলে এই বিষয়ে সবাই জানেন। আমি রাজনীতির এই পর্যায়ে কীভাবে উঠে এসেছি তা দেশের মানুষ জানেন। আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে উঠে আসি নাই। মুক্তিযুদ্ধে বসুরহাটের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার ছিলাম। সুতারাং এই বিষয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়ির কিছুই নেই। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা এমন কিছু বলবেন না যাতে নোয়াখালীর বদনাম হয়। নেত্রী সবার ঊর্ধ্বে, তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই চূড়ান্ত।’

সাক্ষাতের পর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পরে উনার (ওবায়দুল কাদের) সঙ্গে দেখা করার দরকার ছিল। তাই আজ দেখা করতে এসেছি। সেখানে সৌজন্য সাক্ষাত ছাড়াও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে কথা হয়েছে। উনি (ওবায়দুল কাদের) আমাদের বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে সব অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিছু অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের এখন একদফা। তা হলো একরাম চৌধুরীকে (নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী) জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মসূচি এক মাস স্থগিত রেখেছি। সিদ্ধান্তের জন্য জন্য এক মাস অপেক্ষা করবো। তবে আমরা কোনও অবস্থায়ই আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরবো না। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাকে সরতেই হবে। এটার কোনও বিকল্প নাই।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.