নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরেই ‘ম্যাচসেরা’ সাকিব

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১০ মাসের অপেক্ষা ফুরোল। সাকিব আল হাসানের জন্য অপেক্ষাটা আরো দীর্ঘ ছিল। তিনি মাঠে ফিরেছেন প্রায় ১৬ মাস পর। তবে টাইগার অলরাউন্ডারের প্রত্যাবর্তনটা হল রাজসিক। ফিরেই হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ।

জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সবধরণের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে সেই নিষেধাজ্ঞা কাটে। তবে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে ততদিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসিত গোটা বাংলাদেশ। ফলে মাঠে ফেরা হচ্ছিল না কারোই।

এরপর বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্টস কাপের মাধ্যমে ক্রিকেটের মাঠে ক্রিকেট বরপুত্রের আগমন। তবে সেখানে তার পারফরম্যান্স মন জোগাতে পারেনি কারো।

নিজের সেরা ছন্দটা হয়তো সাকিব তুলে রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চের জন্য। তার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ফিফটি হাঁকিয়ে দিয়েছিলেন ছন্দে ফেরার আভাস। এরপর মূল মঞ্চে এসে ঠিকই সব আলো কেড়ে নিলেন সাবেক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সাকিব আসলেই অন্য ধাতুতে গড়া। টাইগার অলরাউন্ডার নিজের রাজ্যে ফিরলেন রাজার মতোই। বোলিংয়ে ঘূর্ণি-বিষ ছড়ালেন, ব্যাটসম্যানদের ঘাম ঝরা ম্যাচে ব্যাট হাতেও খুব একটা খারাপ করলেন না। সবমিলিয়ে বিরতি কাটিয়ে বাংলাদেশের ফেরা আর সাকিবের ফেরাটা আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে রইলো। ক্যারিবীয়দের ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ শুরু করল টাইগাররা।

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়ার পর শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে পাওয়ার প্লে’র প্রথম দশ ওভার পেসারদের দিয়েই সারেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এগারতম ওভারে বল তুলে দেন সাকিবের হাতে। নিজের প্রথম ওভারেই দারুণ কিছুর আভাস, সাকিবের ঘূর্ণিতে অন্তত তিনবার ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানায় লাগে বল। একটুর জন্য উইকেটের দেখা পাননি।

তবে প্রথম ওভারে উইকেট না পেলেও পরে ঘূর্ণিতে ক্যারিবীয়দের ঠিকই কুপোকাত করেছেন সাকিব। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার বল করেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ক্যারিবীয় ইনিংসের ২৩তম ওভারে যখন আক্রমণ থেকে সরানো হয় সাকিবকে, তখন তার নামের পাশে বোলিং ফিগার ৭-২-৮-৩; এই স্পেলে ৩৪টি বলই ছিল ডট!

পরে সাকিবের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে তিন উইকেট নেন অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ। মেহেদি হাসান মিরাজের ঝুলিতে যায় এক উইকেট। ততক্ষণে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের গুটিয়ে দিতে ৩৩তম ওভারে ফের আনা হয় সাকিবকে। দ্বিতীয় বলেই তুলে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেট। সবমিলিয়ে বোলিং ফিগার দাঁড়ায়: ৭.২-২-৮-৪!

এতো গেল বোলিং ফিগার। ব্যাট হাতেও টাইগারদের অস্বস্তির দিনে খুব একটা খারাপ করেননি সাকিব। ১২৩ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫৭ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে এগিয়ে নিতে ব্যাট হাতে ছিলেন সাবলীল। টাইগারদের স্কোর ১০০ পার করে দিয়ে তবেই ফিরেছেন। সেটাকেও দুর্ভাগ্য বলা যায়। ক্যারিবীয় স্পিনার আদিল হোসেনের বলটা ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। ৪৩ বলে ১ বাউন্ডারিতে সাকিব করেন ১৯ রান।

রানটা বড় কিছু না হলেও উইকেটের যে অবস্থা ছিল, ক্যারিবীয়দের পর টাইগার ব্যাটসম্যানরাও স্বচ্ছন্দ্যে ছিলেন না। লো স্কোরিং ম্যাচে ৪ উইকেট আর ১৯ রান নিয়ে সাকিব আল হাসানই ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা বাগিয়ে নিলেন।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.