‘মায়ের কষ্ট বুঝলে আল্লায়ও আমার কষ্ট বুঝব’

রাতের আঁধারে রাজধানীর ধানমন্ডির সিটি কলেজের সামনে দাঁড়ানো এক শিশু। নাম মো. সাব্বির। বয়স মাত্র দশের ঘরে। দ্বিতীয় শ্রেণি পেরিয়ে কেবল তৃতীয়তে উঠেছে। এই সময়ে তার মতো শিশুদের নতুন বই নিয়ে পড়ায় মনোযোগী হওয়ার কথা থাকলেও সাব্বির বেরিয়েছে অন্নের খোঁজে। তাই হাতে মাস্কের বাক্স নিয়ে এক বাস থেকে অন্য বাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর হাক-ডাকে বাসের মধ্যে বিক্রি করছে মাস্ক।

সাব্বিরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। পরিবার নিয়ে থাকেন ধানমন্ডির ছোট একটি ভাড়া বাসায়। বাবা বছর তিনেক আগেই পরিবার ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বাসায় রয়েছে মা, নানি আর বড় দুই ভাই। ষাট বয়সী নানি ছাড়া পরিবারের সবাই কোন না কোন কাজ করছেন। সবার ছোট ছোট উপার্জনেই কোনভাবে টিকে আছে তার পরিবার।

সাব্বিরের মা শিল্পী বেগম রাজধানীর নিউ মার্কেটে লুছনি (পতিল ধরার কাপড়) বিক্রি করেন। মায়ের উপার্জনে সংসার চললেও কেন এই বয়সে মাস্ক বিক্রি করে সেই প্রশ্নের জবাবে সাব্বির বলে, ‘মায়ের কষ্ট বুঝলে আল্লায়ও আমার কষ্ট বুঝব। মায়ে যে কয়টাকা পায় সেটা কিস্তি আর ঘর ভাড়া দিয়াই শেষ হইয়া যায়।’

গত চার মাস ধরেই সাব্বির মাস্ক বিক্রি করছে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি এলাকায়। তার বাক্সে থাকা পাঁচ পিছ মাস্কের প্যাকেট বিক্রি করছে ১০টাকা। সাব্বির জানায়, প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মতো লাভ হয়। আগে আরও বেশি হতো। এই টাকা দিয়ে তার পরিবারের বাজার খরচ বহন করেন শিল্পী বেগম।

জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া সাব্বির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বুনে। বড় হয়ে মায়ের কষ্ট লাঘব করার প্রত্যাশা নিয়ে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়াও করতে চায়।

অর্থসূচক/এনএইচ/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.